নওগাঁ প্রতিনিধিঃ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অতি পুরানো বলতে গেলে বলা যায় প্রতিষ্ঠানের সূচনালগ্ন থেকেই। বর্তমানে এ দূর্ণীতি যেন তুঙ্গে উঠেছে। এখন এ দূর্ণীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধ করে মেধার মাধ্যমে অধ্যক্ষ থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত সকল পদের নিয়োগ সরকারি ভাবে চায় নওগাঁর শিক্ষকরা ও শিক্ষানুরাগীরা।
জানা যায়, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ন্যায় নওগাঁর প্রতিষ্ঠান গুলোতে চলেছে নিয়োগ বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসা। গত ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ ক্ষমতা এনটিআরসিএ’কে দেওয়া হয়। তখন থেকে এ পদে নিয়োগ বাণিজ্যের কোন অভিযোগ নেই। বর্তমানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ-উপাধাক্ষ, প্রধান-সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে পরিচালনা পর্ষদের হাতে। এমপিওভুক্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা সভাপতি নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বা স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে তাদের ইশারাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ-উপাধাক্ষ, প্রধান-সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয়।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের হাতে সকল ক্ষমতা থাকায় ইচ্ছে করলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের ইচ্ছের বাহিরে যেতে পারে না। যদি কোন প্রধান বা অন্য কোন শিক্ষক-কর্মচারী যায় তাহলে তাদের উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন। তাদের বিরুদ্ধে করা হয় কারণ দর্শানোর নোটিশ বা সাময়িক বরখাস্তের চিঠি। এ কারণে চাইলেও অনেকে যেতে পারেন না তাদের বিরুদ্ধে। এই নিয়োগ বাণিজ্য যেন একটি চিরাচরিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত যতবার পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে ততবারই বেড়েছে নিয়োগ বাণিজ্য।
গত ২৪ শের গণঅভ্যুত্থানের পর দেখা যায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অন্যান্য শিক্ষকদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষকই ব্যক্তি আক্রোশের শিকার হয়েছে বলে জানা যায়। শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় ও দূর্ণীতি রোধে বেতনভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি যোগ্য শিক্ষককে প্রশাসনিক পদায়ন করা এবং মেধার ভিত্তিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষায় নতুন একমাত্রা যোগ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন শিক্ষানুরাগীরা।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও গোবরচাপাহাট উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক মো. নুর ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ অবশ্যই এনটিআরসির মাধ্যমে হওয়া উচিত। কারণ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিটি নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করে। অবশ্যই এই অনিয়ম বন্ধ করা উচিত।
জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রাণীনগরের মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর প্রাং বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগে প্রচলিত ম্যানেজিং কমিটির পরিবর্তে এনটিআরসিএ অথবা সরকারি প্রক্রিয়ায় নিয়োগ ব্যবস্থা সময়ের দাবি। গত ৫ আগষ্ঠ গনঅভূ্ন্থানের পূর্বে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ক্ষেত্র মতে শিক্ষকগণ অসহায় হয়ে পড়তে হয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকগণ পূর্বের নিয়োগকে কেন্দ্র করে বর্তমান প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দ্বারা অনাকাঙ্খিত ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে, এমনকি বর্তমানে ও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর শৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সকল নিয়োগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট সবিনয় নিবেদন করছি।
You cannot copy content of this page