একটি দেশের উন্নয়নের প্রথম ও পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা।বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারেনা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল তিনটি স্তর হলো: প্রাথমিক শিক্ষা,মাধ্যমিক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা। শিক্ষার এই তিনটি স্তর এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ৯৭% এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা। পালন করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় এই যে,স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ আজ অবধি রাষ্ট্রের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী। যা সমাজ,রাষ্ট্র তথা পুরো শিক্ষক জাতির জন্য লজ্জার কারণ একজন এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক শুরু বেতন পান ১১তম গ্রেডে।
বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে,দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বেতন হচ্ছে বাংলাদেশর শিক্ষকগণদের।যেখানে মালদ্বীপের একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯০ হাজার,ভারতে ৪০ হাজার টাকা,নেপালে ৩৫ হাজার টাকা,ভূটানে ৩৯ হাজার টাকা,পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায়ব ৩২ হাজার টাকা ।এছাড়াও বিশ্বে বাংলাদেশের চেয়ে
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অনেক দেশের শিক্ষকগণের বেতন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি এবং এছাড়াও, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে শিক্ষকদের বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশি। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন এবং তাইওয়ানের মতো দেশগুলোতে শিক্ষকরা ভালো বেতন, আবাসন, স্বাস্থ্য বীমা এবং বিমান ভাড়ার মতো সুবিধা পান অথচ
বাংলাদেশের একজন এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক শুরুতে বেতন পান সর্বসাকুল্যে ১২,৭৫০ টাকা।যা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্ব গতির বাজারে নিতান্তই সামান্য।
শিক্ষকগণদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে স্নাতক/স্নাতক সমমান।সহকারী শিক্ষকগণ বেতন পান ১১তম গ্রেডে।অথচ সম যোগ্যতা নিয়ে পিটিআই, বিএড এর পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক,পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর,উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা,নার্স তারা বেতন পান ১০ম গ্রেডে।এক সময় যদিও তারা ১১ তম গ্রেডে বেতন ভাতা পেতেন।পরবর্তীতে তাদেরকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। উল্লেখিত গ্রেডের কর্মকর্তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষকগণেরা হয়েছেন বৈষম্যের শিকার।ফলে মেধাবীরা এই পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছেনা।কেউ কেউ শিক্ষকতা পেশায় আসলেও বৈষম্যের কারণে অল্প কিছুদিন পর তারা অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছে।যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। তাই,রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও সংস্কার অপরিহার্য।শিক্ষকগণের সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা বাড়াতে হবে। নিতে হবে জীবনমান উন্নত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষকগণের কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির (১০ম গ্রেড)মর্যাদা দিতে হবে বিএড নামক কালো আইন বাতিল করে।শিক্ষকগণের মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমেই শিক্ষার মান আরো উন্নত হবে বলে জনমনে প্রত্যাশা।
একজন এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক
You cannot copy content of this page