বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় স্তম্ভ হলেন দেশের লাখ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা। তারা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টি শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে উৎসর্গ করে দেন। কিন্তু দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে গিয়ে তাদের জীবনের চিত্র হয়ে ওঠে করুণ, বেদনায় ভরা। বরং বলা যায়, চাকরি জীবনের সীমাবদ্ধতার চেয়েও অবসরে গিয়ে তাদের বঞ্চনা আরও প্রকট হয়।
কর্মজীবনে সীমিত সুযোগ, অবসরে সংকটময় বাস্তবতা
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর জীবনে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়া ভাতা, বোনাসসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এসব সুবিধা প্রায় সীমিত অথবা অনুপস্থিত। অবসরে গিয়ে তারা অনেক সময় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।
তাদের প্রধান সমস্যাগুলো হলো:
অবসরকালীন পাওনা অর্থ পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
অনেকেই বছরের পর বছর আবেদন করে ঘুরেও ন্যায্য পাওনা বুঝে পান না।
গ্র্যাচুইটির অর্থ প্রাপ্তির প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
পেনশন সুবিধা নেই বা থাকলেও অতি সামান্য।
চিকিৎসা বা মেডিকেল খরচের কোনো সহায়তা নেই।
অধিকাংশ পরিবার সন্তান-সন্ততির দয়ায় জীবনের শেষ দিনগুলো পার করেন।
অবসরকালীন ভাতা প্রাপ্তি একটি যন্ত্রণার নাম
যাদের সেবা দিয়েই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে, সেই শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে গিয়েও প্রশাসনিক নানা জটিলতা, বিলম্ব, হয়রানি ও দালালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন।
এমপিওভুক্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান অবসর বোর্ড থাকলেও সেখানে কাগজপত্রে সামান্য ভুলত্রুটি হলে মাসের পর মাস ফাইল আটকে থাকে। অনেক সময় বয়সের ভারে নত, রোগ-শোকে জর্জরিত মানুষগুলো অবসরের অর্থ পাওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সরকারি উদাসীনতা ও সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
সরকার বারবার বেতন কমিশনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব সুবিধা প্রায় কখনোই আলোচনায় আসে না। অথচ তারাও দেশের মানুষের সন্তান, তারাও দেশের সেবক।
তাদের দাবি:
অবসরপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
অবসর ভাতা ও গ্র্যাচুইটি পাওয়ার প্রক্রিয়া সরলীকরণ ও দ্রুততা নিশ্চিত করতে হবে।
চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও বিশেষ সম্মানী প্রদান করতে হবে।
অবসরের পরও প্রয়োজনীয় সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
দালাল-নির্ভরতা ও অনিয়ম বন্ধে ডিজিটাল স্বচ্ছ সিস্টেম চালু করতে হবে।
যারা জাতি গড়ার কারিগর, তারা কেন বঞ্চিত হবেন?
একজন সরকারি চাকরিজীবী তার অবসরে যেমন নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করেন, তেমন সুযোগ একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরও প্রাপ্য। যারা সারা জীবন জ্ঞান বিতরণ করেছেন, মেধা গড়েছেন, নতুন প্রজন্ম তৈরি করেছেন— তাদের শেষ বয়সের দিনগুলো যেন অভাব, কষ্ট আর নির্ভরতামুক্ত হয় — এটাই দেশের মানুষের ন্যূনতম মানবিক প্রত্যাশা।
সরকারের উচ্চমহলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি দেশের এই শ্রেণির প্রতি নজর দেওয়ার অনুরোধ দেশের লাখো শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার বারবার জানিয়ে আসছে। এখন সময় হয়েছে কথার নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
শাহীন আহমদ
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর
আল-আজম হাইস্কুল এন্ড কলেজ,বিশ্বনাথ,সিলেট।
You cannot copy content of this page