বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তেমনি নীরবে-নিভৃতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, এদের শ্রমের ন্যায্য মূল্যায়ন আজও হয়নি। বছরের পর বছর ধরে তারা নানামুখী দায়িত্ব পালন করলেও তাদের সুযোগ-সুবিধা বরাবরই সীমিত থেকে গেছে।
দায়িত্ব ও অবদান:
৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দায়িত্বের পরিধি অনেক বিস্তৃত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য যেসব কার্যক্রম প্রয়োজন তার অধিকাংশই এ কর্মচারীরা পালন করে থাকেন। যেমন:
অফিসের যাবতীয় নথিপত্র পরিচালনা
হিসাব-নিকাশ রক্ষণাবেক্ষণ
ছাত্র-ছাত্রীদের সেবাসংক্রান্ত কাজ
প্রতিষ্ঠানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ও আয়োজনে সহায়তা
শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদকে নানাভাবে সহযোগিতা করা
অনেকে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অদৃশ্য চালিকাশক্তি বলে আখ্যায়িত করেন।
অবহেলা ও বৈষম্য:
এত দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও তাদের বেতন-ভাতা অত্যন্ত সীমিত। সরকারি শিক্ষকদের মতো তাদের কোনো টাইম স্কেল, ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি, চিকিৎসা ভাতা বা উৎসব ভাতা নেই বললেই চলে। অবসরকালীন ভাতা বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুযোগও অনেক সীমিত। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ন্যূনতম চাকরির নিশ্চয়তা পর্যন্ত দেয় না।
যেখানে শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে, সেখানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকারি বিভিন্ন ঘোষণায় তাদের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তা প্রায় উপেক্ষিত থেকে যায়।
ন্যায্য অধিকার নিয়ে প্রশ্ন:
বর্তমানে সারাদেশে কয়েক হাজার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন। তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছেন:
বেতন বৈষম্য দূরীকরণ
চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
ইনক্রিমেন্ট, টাইমস্কেল, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা প্রভৃতি সুবিধা প্রদান
পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি
পেনশন বা অবসরকালীন সুবিধা নিশ্চিতকরণ
করণীয়:
৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করেন, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। তাই সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য শুধু শিক্ষকদের নয়, বরং সম্পূর্ণ কর্মীশ্রেণির সুষম উন্নয়ন জরুরি।
শাহীন আহমদ,
অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর
আল-আজম হাইস্কুল এন্ড কলেজ,বিশ্বনাথ,সিলেট।
You cannot copy content of this page