• রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে নিহত ৩। হাটহাজারীতে স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত। থানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ধামইরহাটে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন মানিকগঞ্জে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৫ নওগাঁয় অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার ৮ ধাপে আবেদন ফরম পূরণ ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির “সর্বজনীন পেনশন নয়, সরকারি পেনশনই চাই” — আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। ভালুকায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বাকবিশিস’ ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ

একজন সাদামনের মানুষের জীবনের গল্প

খালেদ মোশারফ জামালপুর। / ১৫৫ বার দেখা
আপডেট : শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃজামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় সড়কের পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে বটগাছ লাগানো, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, বিয়েতে গাছের চারা উপহার দেওয়া স্কুলশিক্ষক এস এম জুলফিকার আলী ওরফে লেবু মাস্টার। যাঁদের খবর কেউ রাখে না! নিভৃতে, গোপনে সমাজ তথা মানুষের কল্যাণে তাঁরা জীবনব্যাপী কাজ করে যায়। তাঁরা সমাজে অবহেলিত, তাদের মূল্যায়ন কেউ করে না। তবুও তাঁরা বসে থাকেন না। তাঁরা মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের সেবা করে থাকেন। এমনই একজন সাদামনের মানুষ লেবু মাষ্টার। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আমাদের জাতীয় অর্থনীতি, আবহাওয়া এবং জলবায়ু ও মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব অন্তরে ধারণ করে ছোটবেলা থেকে অনবরত বৃক্ষরোপন করে চলেছেন মেলান্দহ উপজেলার কে.জি.এস মহর সোবহান মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস.এম জুলফিকার আলী লেবু। তাঁর বাড়ি উপজেলার ছবিলাপুর গ্রামে। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখক, কথাসাহিত্যিক ও পরোপকারী হিসেবে পরিচিত। বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে জেলাজুড়ে খ্যাতি আছে তাঁর। তিনি উপজেলা পর্যায়ে ‘সেরা শিক্ষক’ নির্বাচিত হয়েছেন। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে বনভূমি আছে মাত্র ১০ শতাংশ। তাই সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এস এম জুলফিকার আলী লেবু তার অগণিত শিক্ষার্থীকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যায় শ্রেণি কক্ষে যেমন উৎসাহ প্রদান করেন, তেমনি পথে-ঘাটে, মাঠে, চায়ের আড্ডায় যেখানেই মানুষের জমায়েত সেখানেই তিনি বৃক্ষরোপণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন। তিনি জামালপুর তথা পাশ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রাঙ্গনে, বিভিন্ন রাস্তার মোড়, খোলা জায়গায় নিরন্তর বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরষ্কার হিসেবে, বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি বৃক্ষপুরস্কার হিসেবে প্রদান করেন। নির্মল বায়ু ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ মানব অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। কারণ বন্যা, জলোচ্ছাস, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধে বৃক্ষই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। প্রাণিকূল বৃক্ষের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। মানুষের খাদ্য, ঔষধ,বস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরিতে, মাটির ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও জলবায়ু ঠিক রাখা, পরিষ্কার পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা, কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও বৃক্ষের ভূমিকা রয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তেই তার সৃজনশীল প্রচেষ্টা। তিনি এ পর্যন্ত চল্লিশ হাজারের উপরে বৃক্ষরোপণ করেছেন। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে- প্রতিদিন কমপক্ষে একটি বৃক্ষ রোপণ করতে না পারলে তার রাতে ঘুম হয় না। তার ইচ্ছা বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় যেন সে বৃক্ষ রোপণ করতে পারেন। তার এই ইচ্ছা পূরণের জন্য এখন শুধু বাধা অর্থনৈতিক সমস্যা। শিক্ষকতা পেশায় পারিবারিক ভরণপোষণ শেষে তার বৃক্ষরোপণ চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কারণ দূরদুরান্তে বৃক্ষরোপন করতে যাতায়াত ব্যয়, বাঁশের বেড়া, মিস্ত্রী খরচ ইত্যাদি মিলে মোটা অঙ্কের ব্যয় হয়ে যায়। কিন্তু কষ্ট হলেও তিনি এ নেশা থেকে দুরে সরে যেতে পারছেন না। কোন এনজিও অথবা সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়ত সারা বাংলাদেশের জেলা-উপজেলায় বৃক্ষরোপণ করা তার পক্ষে সম্ভব হতো। তার বিয়াল্লিশ বছর বৃক্ষরোপণ জীবনের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা ও দুঃখ বুকে ধারণ করে বৃক্ষরোপন অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক জুলফিকার আলী কোনো বিয়ের দাওয়াতে গেলে উপহার হিসেবে চারাগাছ নিয়ে যান। তিনি নিজের টাকায় গত ৪২ বছরে সড়কের পাশে, হাটবাজারে, গ্রামের মোড়ে, ঈদগাহ মাঠে, সরকারি খালি জায়গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে গাছের চারা লাগিয়েছেন। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পাঠাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকার মানুষ তাঁকে পরোপকারী হিসেবে চেনেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘স্যারকে সব সময় দেখেছি মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে। তিনি শিক্ষক হিসেবেও ভালো। ভালো কবিতা লেখেন। গাছ লাগানো, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ নানা সামাজিক কাজ করেন। সমাজে এ ধরনের মানুষ এখন খুব কম।
শিক্ষক জুলফিকার আলীর ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জের বেগম আনোয়ারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই একজন সাদামনের মানুষ। এলাকার সবাই চেনেন ও জানেন। তাঁর পুরো জীবনটাই অসহায়-দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। তাঁর ঠিকমতো দিন চলে না। অথচ যে টাকা বেতন পান, সেটাও অসহায়-দরিদ্র মানুষের জন্য খরচ করেন। জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিনামূল্যে রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙ্গীনায় বট, তালসহ বিভিন্ন বৃক্ষ রোপন করে আসছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে গাছের চারা ও বই উপহার দিয়ে থাকে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ কিনে দিয়ে থাকে। বাল্যবিয়ে বন্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে থাকে। সংসারের চাহিদা মতো বাজারও করতে পারে না এই লেবু মাস্টার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page