ভূমিকা: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরাই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব শিক্ষক ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা, বঞ্চনা ও নানা ধরনের আর্থিক-সামাজিক অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বেতন বৈষম্য: সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন অত্যন্ত কম। একজন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকের শুরুতে মূল বেতন মাত্র ১২,৫০০ টাকা, সাথে বাড়ি ভাড়া ১০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা। এর মধ্যে আবার ১০% কর্তন করা হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পুরো মাস সংসার চালাতে বাধ্য হন একজন বেসরকারি শিক্ষক, যা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে একেবারেই অপ্রতুল। আবার অনেক ননএমপিও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন যারা প্রতিষ্ঠান থেকে নাম মাত্র সম্মানী কিংবা বিনা বেতনে চাকরি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
চাকরির নিরাপত্তাহীনতা: বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটি কিংবা গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের ইচ্ছায় বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে, যা অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাব বা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে ঘটে থাকে। একজন বেসরকারি শিক্ষক চাকরি হারালে আইনি সহায়তা বা পুনর্বহালের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
পেনশন ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব: সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ছুটি বা চিকিৎসা ভাতা এসব সুবিধা বেসরকারি শিক্ষকদের নেই বললেই চলে। ফলে চাকরিজীবনের শেষে তারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হন। অনেকেই বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বয়সে টিউশনি করে বা অন্যের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন।
সম্মান ও মর্যাদার অভাব: যেখানে শিক্ষকতা পেশাকে সমাজে সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে দেখা উচিৎ, সেখানে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে প্রায়ই সম্মানহীনভাবে দেখা হয়। তাঁদের অবদান অনেক সময় অদৃশ্য থাকে, যা তাঁদের মানসিকভাবে আঘাত করে।
নির্দেশনা ও অনুরোধ:
১. বেতন কাঠামোতে সামঞ্জস্য আনা: বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ও সম্মানজনক ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
২. চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিভাবে সুরক্ষিত করতে হবে।
৩. সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান: বেসরকাসি শিক্ষকদের সরকারি নিয়মে পেনশন, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. মর্যাদা ও স্বীকৃতি: বেসরকারি শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়টি জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
উপসংহার: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পেছনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবদান অপরিসীম অথচ তাঁরা আজ অবহেলিত ও বঞ্চিত। তাঁদের জীবনমান উন্নয়ন করা মানে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মান উন্নয়ন করা। এখনই সময় এই পেশাজীবীদের দিকে সরকারের ও সমাজের সদয় দৃষ্টি দেওয়ার।
ছামিউল ইসলাম রিপন
প্রভাষক- বাংলা
বলদীআটা ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।
You cannot copy content of this page