শিক্ষক সমাজ একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পুরুষের
গঠন তথা জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের শ্রম ও
dedication এর মাধ্যমে প্রজন্মের প্রজন্মকে গড়ে তোলা হয়। কিন্তু
বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের দেশের শিক্ষকরা যেকোনো ধরনের
সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত, যা থেকে শিক্ষকতা পেশার প্রতি
অরুচি বাড়ছে। ফলে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চাচ্ছে না। বিশেষ এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষকদের বেতন ও ভাতার
বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শুরুতে ১১ গ্রেডের ১২৫০০/- টাকা বেতন ভাতা পান, এর সাথে বাড়িভাড়া মাত্র ১০০০/- মেডিকেল ভাতা পান মাত্র ৫০০/- টাকা, এই সামান্য বেতন থেকে আবার ১০% কল্যাণ তহবিলে কর্তন করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১২৫০০ টাকায় একজন শিক্ষকদের পক্ষে তার পরিবার নিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব, ৮০% শিক্ষক ঋণে জর্জরিত। মেডিকেল ভাতা ৫০০/- টাকা দিয়ে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা সম্ভব নয়, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ১০০০/- টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া যায়।
শিক্ষকরা দুর দুরন্ত স্থানে চাকুরী করে তাদের নেই যাতায়াত ভাতা।
আমি মনে করি শিক্ষকদের সকল বেতন- ভাতা সরকারি চাকুরিজীবীদের মত হওয়া উচিত।
প্রথমত, প্রথমত এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষদের বাড়ি ভাড়া ৪৫% করতে হবে, মেডিকেল ভাতা, উৎসব ভাতা এবং অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি করে সরকারি নিয়মে দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে হবে, শিক্ষকদের বেতন গ্রেডের উন্নয়ন করতে হবে, শিক্ষকতা হবে প্রথম শ্রেণির চাকুরি।
তৃতীয়ত, আকর্ষনীয় বেতনের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহী করতে হবে।
চতুর্থত, স্কুলের সকল আয় সরকারি কোষাগারে নিতে হবে এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষসহ সকল পদে সরকার কতৃক নিয়োগ দিতে হবে।
পঞ্চমতম, বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে।
ষষ্ঠত, প্রতিটি বিদ্যালয় অনলাইন হাজিরা ডিভাইস চালু করতে হবে।
সপ্তম, শিক্ষকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা
সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। অনেক শিক্ষক দুর্বল আর্থিক
অবস্থার কারণে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়েও সমস্যায় পড়েন।
অষ্টম, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো
উচিত। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়মিত
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে, শিক্ষকরা আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি
শিখতে সক্ষম হবেন। এর ফলে তারা নিজেদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি
করতে পারবেন, যা ছাত্রদের শিখন মানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নবম, শিক্ষকদের সরকারি নিয়মে পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অবশেষে, শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী
পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে, শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, সমাজে
শিক্ষার উন্নয়ন ঘটবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন করবে।
শিক্ষকদের জন্য একটি শক্তিশালী ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে
হলে, আমাদেরকে এখনই এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে। এতে
করে শিক্ষাক্ষেত্রে যোগ্য সম্ভাবনার উন্মোচন ঘটবে এবং জাতির
উন্নয়নে একটি শক্ত ভিত্তি স্থাপন হবে।
কলামিস্ট ও লেখক
এম. লোকমান হোসাইন
সহকারী শিক্ষক – তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
টিয়ারখালী স্কুল এন্ড কলেজ
You cannot copy content of this page