আজ বাংলা বর্ষপঞ্জির আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। এই দিনটি শুধু একটি ক্যালেন্ডারের পাতার উল্টে যাওয়া নয়, বরং বাংলার প্রকৃতিতে এক নতুন আবহের সূচনা। আষাঢ় মানেই বর্ষার আনুষ্ঠানিক আগমন। আর তার প্রথম সকালেই আকাশ যেন আপন মনের কথা বলতে শুরু করেছে মেঘের ভাষায়।
সকাল থেকেই চারপাশে এক ধরনের নিরবতা, বাতাসে হালকা শীতলতা আর আকাশজুড়ে ধূসর মেঘের রাজত্ব। সূর্যের দেখা নেই, তবুও আলো লুকোচুরি খেলছে মেঘের ফাঁকে। কখনো হালকা ফোঁটা পড়ছে, আবার থেমে গিয়ে শুধু মেঘের গর্জনে জানান দিচ্ছে, “আমি এসেছি”।
মেঘলা আকাশের এই আবহ বাংলার লোকজীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িত। কৃষকের মনে এখন আশার সঞ্চার, কারণ বর্ষা মানেই বীজ বোনা, নতুন ধানের স্বপ্ন। শহরের মানুষ হয়তো ভিজে ছাতার ভাঁজে একটু বিরক্তি খোঁজে, কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমী হৃদয়ে এই দিন এক অনন্য আনন্দের উপলক্ষ।
শিশিরস্নাত বাতাস, ধীরে ধীরে জমে ওঠা কালো মেঘ, দুরে কোথাও একটানা বৃষ্টির শব্দ – সব মিলিয়ে আষাঢ়ের এই প্রথম দিন প্রকৃতিকে করে তোলে এক রহস্যময় কাব্যের মতো। কবি যেমন বলেন:
“আষাঢ়ে গগনে গরজে মেঘ,
বৃষ্টি নামবে বুঝি আজ ভোরেই।
চোখ মেলে দেখি, মেঘে ঢাকা আলো,
প্রকৃতি গায় বর্ষার সুরে ঝরঝরেই।”
আষাঢ়ের প্রথম দিনে মেঘলা আকাশ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির সৌন্দর্য কেবল রোদের উজ্জ্বলতায় নয়—মেঘের ছায়া, বৃষ্টির শব্দ, আর আকাশের এই অনির্বচনীয় গম্ভীরতাতেও।
এমন এক মেঘলা দিনে, হঠাৎ করেই কদম ফুলের গন্ধ ভেসে আসে বাতাসে। রাস্তার ধারে ভেজা মাটির উপর সাদা-হলুদ বলের মতো ছড়িয়ে পড়ে থাকা কদম ফুল যেনো আষাঢ়ের আকাশের শ্রাবণভেজা প্রেমপত্র। এই ফুল শুধু প্রকৃতির নয়, হাজারো প্রেমিক-প্রেমিকার মনের অমলিন স্মৃতিও।
আজকের এই আষাঢ়ের আকাশ, আমাদের মনে আনুক শুদ্ধতা, তৃষ্ণার পরিতৃপ্তি, আর নতুন শুরুর এক প্রাকৃতিক বার্তা।
You cannot copy content of this page