কুতুব উদ্দিন আহমেদ,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: “আমরা ভিক্ষুক নই, আমরা এই দেশের শিক্ষক। আমাদের জীবনের শেষ প্রান্তে ঠকানোর ফাঁদ আমরা কখনো মেনে নেব না।” এমনই জ্বালাময়ী হুঁশিয়ারিতে উত্তাল দেশের এম পি ও ভুক্ত শিক্ষক সমাজ । এমপিওভুক্ত ৫ লক্ষ বেসরকারি শিক্ষক আজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন— সার্বজনীন পেনশন নয়, আমাদের চাই পূর্ণাঙ্গ সরকারি পেনশন।
প্রশ্ন ওঠেছে— যে শিক্ষকরা দেশের মেধা গড়ে তুলছেন, তাদের বার্ধক্যে কেন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া হবে? শিক্ষক নেতারা বলছেন, এই ‘সর্বজনীন পেনশন’ প্রকল্প আসলে শিক্ষকদের সাথে আর্থিক প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।
‘সর্বজনীন পেনশন’-এর আসল রূপ কী?
সরকারের ঘোষিত সার্বজনীন পেনশন প্রকল্প আসলে একটি ‘জবরদস্তিমূলক কর্তন প্রকল্প’। এখানে সরকার নিজে কিছুই দেবে না, বরং শিক্ষকদের স্বল্প বেতনের কিছু অংশ কেটে রেখে ভবিষ্যতে ‘পেনশন’ বলে ফেরত দেওয়ার নামে মিথ্যাচার করছে।
হাজী গোলাম হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর সিনিয়র শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,
“সরকারি কর্মচারীরা মাস গেলে পূর্ণ বেতন পান, চাকরিজীবনের শেষে পুরো পেনশন পান। আর শিক্ষক? মাস শেষে টাকা পায় না, অবসরে গিয়ে দুস্থ হয়ে পড়ে। এখন আবার সর্বজনীন পেনশনের নামে শিক্ষকদের পকেটে হাত দেওয়া হচ্ছে। এ অবিচার আর বরদাশত করা হবে না।”
বঞ্চনা আর কতদিন?
বেসরকারি শিক্ষকরা যুগের পর যুগ ধরে বৈষম্যের শিকার। সরকারি শিক্ষকদের মতো বেতন নেই, চিকিৎসা নেই, নিরাপত্তা নেই— অবসরকালীন সুরক্ষা তো আরও দূরের কথা। এখন পেনশনের নামে টাকা কেটে তাদের ভবিষ্যৎও অন্ধকার করার পাঁয়তারা চলছে।
‘এই অপচেষ্টা রুখে দিতে আমরা রাজপথে নামতেই বাধ্য হবো’
বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষক নেতারা সরাসরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য পূর্ণাঙ্গ সরকারি অর্থায়নে আলাদা পেনশন স্কিম ঘোষণা করতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল করতে হবে।
শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে।
শিক্ষকদের ন্যায্য সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পৃথক কমিশন গঠন করতে হবে।
দাবি মানা না হলে আগামী মাস থেকে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
‘শিক্ষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’— এই স্লোগানে মুখর পুরোশিক্ষক সমাজ।
‘আমরা পেনশন চাই, প্রতারণা চাই না। দাবি না মানা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে।’ দেশের প্রায় ২৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আজ ক্ষুব্ধ, ক্ষিপ্ত এবং বঞ্চিত। এই বঞ্চনার জবাব তারা রাজপথেই দিতে প্রস্তুত।
‘এই আন্দোলন বেঁচে থাকার, এই আন্দোলন সম্মান বাঁচানোর।’
You cannot copy content of this page