গ্যালারিতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়ে খাগড়াছড়িতে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বলী খেলায় বাঘা শরীফ ও মাসিনু মারমা চ্যাম্পিয়ন
‘শক্তি, সাহস ও জয়ের আলীঙ্গনে বলীয়ান শপথে’ এই শ্লোগানে খাগড়াছড়ি বলী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা। দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে আগত ৬০ জন অংশগ্রহণকারীর এ প্রতিযোগিতায় পুরুষ বিভাগে কুমিল্লার বাঘা শরীফ আর নারী বিভাগে খাগড়াছড়ির মাসিনু মারমা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
ঐতিহ্যবাহী এ বলী খেলায়
৪৪ জন পুরুষ ও ১৬ জন নারী অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী এ বলী খেলায়
মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেলে খাগড়াছড়ি ষ্টেডিয়ামে ঐতিহ্যবাহী এই বলী খেলার উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।
আয়োজকরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বলী খেলাটির বিকাশ, সংরক্ষণ ও বলী খেলোয়াড় তৈরি এবং দর্শকদের আনন্দ দেওয়াই ছিল এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য । খাগড়াছড়ি বলী সংগঠন এ খেলার আয়োজন করে ।
এ সময় খেলায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে আগত ৬০ জন বলী । এর মধ্যে ৪৪ জন পুরুষ ও ১৬ নারী বলী এই খেলায় অংশগ্রহণ করেন। তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত এ বলী খেলায় সিনিয়রদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার বাঘা শরীফ বলী আর রানার্স আপ হন একই জেলার রাশেদ মাল বলী। জুনিয়রদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার নয়ন বলী, রানার্স হন রাঙ্গামাটির নানিয়াচরের চিকন চাকমা বলী।
নারী বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন খাগড়াছড়ির মাসিনু মারমা বলী আর রানার্স আপ হন শরীয়পুরের কাজল আক্তর বলী।
এতিহ্যবাহী এ খেলা উপভোগ করতে হাজারো দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন। গ্যালারিতে উপচে পড়া দর্শকের করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পুরো স্টেডিয়াম । গত বছর থেকে খাগড়াছড়ি বলী সংগঠনের উদ্যোগে এই বলী খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরে খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ প্রদান করেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বলী খেলা পাহাড়ের কৃষ্টি সংস্কৃতির অংশ। মাঝে এ খেলাটি পার্বত্য অঞ্চল হতে হারিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির এ সব খেলাধুলা যাতে হারিয়ে না যায় সে বিষয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।
এ সময় তিনি পাহাড়ের লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি উদ্ধারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এদিকে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বারের বলি খেলার আদলে খাগড়াছড়িতে বলি খেলাটি যাতে আয়োজন করা হয় এমন দাবি তুলেছেন খেলোয়াড় ও দর্শকরা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মর্ম সিং ত্রিপুরা বলী ও সাধারণ সম্পাদক রিটন চাকমা জানান, বলী খেলা একটি পাহাড়ের ঐহিত্যবাহী খেলা, বহু আগে পার্বত্য জেলা গুলোতে এই খেলার প্রচলন ছিল। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য খাগড়াছড়ি থেকে বলী খেলোয়াড় তৈরি করা এবং দর্শকদের বিনোদিত করা। পাশাপাশি বলী খেলাটাকে মানুষের একদম কাছে নিয়ে যাওয়া এবং খেলার মাধমে বলীরা যাতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত কুস্তি খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক (গনিত)
পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়,
খাগড়াছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি।
You cannot copy content of this page