পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ আছেন, যিনি দিনের পর দিন নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছা আর সুখ-সাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখের একটুখানি হাসির জন্য জীবন পার করে দেন। ক্লান্তি, দুঃখ কিংবা অভাবের কথা কখনো বলেন না। সন্তানের সুখটাই যেনো তাঁর জীবনের একমাত্র আরাধ্য। সেই মানুষটির নাম— বাবা।
বাবারা খুব কমই আবেগ দেখান। কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি প্রয়াসে তিনি সন্তানের জন্য যা করেন, তা যে কোনো শব্দের বাইরের ভালোবাসা। কখনো স্কুলে যাওয়ার আগে টিফিনের টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া, কখনো বিকেলে ক্লান্ত শরীরে বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরেও সন্তানের হাসিমুখ দেখে নিজের ক্লান্তি ভুলে যাওয়া—এভাবেই বাবারা ভালোবাসেন। সন্তান বড় হলে হয়তো মুখে বলেন না, তবে চোখের গভীরে লুকিয়ে রাখেন হাজারো স্বপ্ন আর আশীর্বাদ।
বিশ্বের নানা দেশে বাবাদের সম্মান জানাতে পালিত হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। এই দিবসের সূচনা হয়েছিল ১৯১০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের স্পোকেন শহরে। সোনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক নারী তাঁর বাবা উইলিয়াম স্মার্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমবারের মতো ‘ফাদার্স ডে’ উদযাপন করেন। তিনি চাইতেন মায়েদের মতো বাবারাও যেনো একটি বিশেষ দিনে সন্তানদের ভালোবাসা ও সম্মান পান। ধীরে ধীরে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এবং ১৯৭২ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি পায়। এরপর বিশ্বের বহু দেশেই পালিত হয়ে আসছে এ বিশেষ দিনটি। বাংলাদেশেও জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালিত হয় ‘বাবা দিবস’।
কিন্তু দুঃখজনক সত্য, আমরা অনেক সময় এই ভালোবাসার মূল্য বুঝি তখন, যখন সেই মানুষটি আর আমাদের পাশে থাকেন না। তখন স্মৃতির ভিড়ে ভেসে ওঠে বাবার সঙ্গে মেলার গল্প, চাকরির প্রথম বেতন বাবার হাতে তুলে দেওয়ার মুহূর্ত কিংবা সন্তানের ছোট্ট সাফল্যে বাবার প্রশান্ত হাসিটা। অথচ জীবদ্দশায় খুব কমই বুঝাতে পারি — ‘বাবা, তোমাকে ভালোবাসি।’
আজ বিশ্ব বাবা দিবস। তবে শুধু এই দিবসে নয়, প্রতিদিনই আসুন বাবার জীবনে একটু সময় দিই। তাঁর সঙ্গে শেয়ার করি জীবনের গল্প, পুরোনো দিনের কথা কিংবা প্রিয় কোনো স্মৃতি। হয়তো একটা ফোন, একটা আলিঙ্গন কিংবা সন্ধ্যার চায়ের আড্ডাই হয়ে উঠতে পারে বাবার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। আসুন বাবার সেই নীরব ছায়াটিকে একটু আলোতে নিয়ে আসি। জানিয়ে দিই— ‘তুমি আছো বলেই জীবন এতটা নির্ভরতার।’
বিশ্বের সব বাবার প্রতি রইল অশেষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। যাঁরা আমাদের মাঝে আছেন, তাঁরা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আর যাঁরা না-ফেরার দেশে চলে গেছেন, তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি। কারণ বাবারা ঠিক অদেখা ছায়ার মতোই জীবনভর সঙ্গী হয়ে থাকেন, কখনো দূর থেকে, কখনো মনের গহিনে।
You cannot copy content of this page