• শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

“সর্বজনীন পেনশন নয়, সরকারি পেনশনই চাই” — আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

মো : ছামিউল ইসলাম রিপন / ২০২ বার দেখা
আপডেট : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে নিজেদের বাদ রাখার দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের সরল ও একদমই সুস্পষ্ট দাবি- “আমরা সর্বজনীন পেনশন চাই না, চাই সরকারি পেনশন”।

সরকার ২০২৩ সালে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন’ পাসের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের জন্য স্বেচ্ছা ভিত্তিক ও পরে বাধ্যতামূলক ভিত্তিতে পেনশন সেবা চালুর উদ্যোগ নেয়। এতে ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’, ‘সমতা’ ও ‘প্রবৃদ্ধি’ নামের চারটি ভিন্ন স্কিম চালু করা হয়। পরে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এই স্কিমে অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা সরকারের পক্ষ থেকে সামনে আসে।

সরকারি চাকরিজীবী নই, কিন্তু দায়িত্বে সরকারি- তাহলে পেনশনে বৈষম্য কেন?

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, তারা সরকারের অধীনে জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় পাঠদান করেন, বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয় সরকারি বিধি অনুযায়ী, এমনকি চাকরির শৃঙ্খলাবিধিও বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু অবসরের পর পেনশন সুরক্ষায় তাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে একটি স্ব-অংশদানভিত্তিক বিকল্প স্কিমে, যা স্থায়ী নিরাপত্তা দেয় না।

বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. গোলাম মাহবুব বলেন,
“একজন সরকারি অফিস সহায়ক পেনশন পান, কিন্তু একজন শিক্ষক, যিনি জাতি গঠনের কারিগর, অবসরে গিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকবেন- এটা কি ন্যায্য?”

কেন সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাখ্যান করছেন শিক্ষকরা?

১. নিজ খরচে চাঁদা: সর্বজনীন পেনশনে চাকরির সময় নিয়মিত নিজের আয় থেকে চাঁদা দিতে হয়, যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের পুরো পেনশন রাষ্ট্রীয় খরচে হয়।

২. নির্দিষ্ট সময় পর টাকা তোলা যায়: সর্বজনীন পেনশনে ৬০ বছর পূর্ণ না হলে টাকা তোলা যায় না। অনেক শিক্ষক স্বাস্থ্যঝুঁকি বা অন্য কারণে আগেই অবসর নেন।
৩. পরিবারের জন্য অনিশ্চয়তা: সরকারি পেনশনে অবসরের পর মৃত্যুবরণ করলে পরিবার নিয়মিত ভাতা পায়; সর্বজনীন পেনশনে এমন গ্যারান্টি নেই।

৪. চাকরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু সুবিধা নয়: শিক্ষকরা বলেন, “চাকরির শুরু থেকে অবসর পর্যন্ত আমরা সরকারি নিয়মে চলি, তাহলে কেন আমাদের পেনশনের প্রশ্নে ব্যতিক্রম করা হবে?”

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তারা সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পাচ্ছেন, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অবসরকালীন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতীয়করণ না হলেও অনেকেই প্রত্যাশা করছেন অন্তত পেনশন সুবিধা সরকারি কর্মচারীদের মতোই নিশ্চিত করা হোক।

শিক্ষক নেতাদের দাবি:
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র “সরকারি পেনশন স্কিম” চালু করতে হবে।.
২. সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে তাদের অব্যাহতি দিতে হবে।
৩. শিক্ষকদের জন্য ‘চাকরি জাতীয়করণ’ বা ‘সরকারি পেনশন কাঠামো’তে অন্তর্ভুক্তির নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে শিক্ষক সংগঠনগুলোর ব্যানারে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে শিক্ষকরা জানান, এই বিষয়ে দ্রুত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত না এলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “যদি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-কাঠামো, নিয়োগ, অবসান ইত্যাদি সরকারি পর্যবেক্ষণে হয়, তাহলে পেনশনেও সমান সুযোগ তাদের প্রাপ্য। শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা না থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান কখনোই নিশ্চিত হবে না।”

দেশ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা যেন অবসরের পর জীবনযুদ্ধে পরাজিত না হন, সে জন্য পেনশন ইস্যুতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আরও মানবিক ও ন্যায্য হওয়ার সময় এখনই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page