• বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০১:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে নিহত ৩। হাটহাজারীতে স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত। থানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ধামইরহাটে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন মানিকগঞ্জে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৫ নওগাঁয় অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার ৮ ধাপে আবেদন ফরম পূরণ ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির “সর্বজনীন পেনশন নয়, সরকারি পেনশনই চাই” — আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। ভালুকায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বাকবিশিস’ ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার এপিঠ -ওপিঠ সংকট নিরসনের উপায়।

প্রতিনিধির নাম / ১৭৫ বার দেখা
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার এপিঠ -ওপিঠ সংকট নিরসনের উপায়।

 

বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ মুসলমান, যারা কুরআন ও সুন্নাহকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে। ইসলামের মূল শিক্ষাগুলো—নৈতিকতা, আত্মিক উন্নয়ন, এবং সমাজ গঠনের ভিত্তি মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমেই অধিকতরভাবে বিস্তার লাভ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার এত বছর পরও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করেনি। বর্তমান শিক্ষানীতির প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসা শিক্ষার অবস্থা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করা আজ সময়ের দাবি।

 

✓বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা ব্রিটিশ শাসনামলে, ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত “কালেকাতা আলিয়া মাদ্রাসা” থেকে। এটি ছিল উপমহাদেশের প্রথম সরকার-নিয়ন্ত্রিত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। লর্ড ওয়্যারেন হেস্টিংস মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিচার ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ইসলামি আইনবিদ ও কাজী তৈরি করার উদ্দেশ্যে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ধীরে ধীরে ঢাকাসহ বাংলার বিভিন্ন স্থানে আলিয়া মাদ্রাসা গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার আলিয়া মাদ্রাসাকে আধুনিকীকরণের দিকে গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা দুটি ধাপে বিভক্ত— সাধারণ ও ধর্মীয় বিষয়ের সমন্বয়। দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে থাকে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ইসলামি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানেও পারদর্শী হতে পারে।

 

✓বর্তমান বাস্তবতা ও চিত্র

বাংলাদেশে বর্তমানে দুই ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা চালু আছে—আলিয়া মাদ্রাসা (সরকারি পাঠ্যক্রমভুক্ত) এবং কওমি মাদ্রাসা (স্বতন্ত্র পাঠ্যক্রম অনুসরণকারী)। আলিয়া মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে শত শত প্রতিষ্ঠান থাকলেও, এর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ফলে, অধিকাংশ মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগে, যেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব স্পষ্ট।

 

বাংলাদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থাকলেও, ইসলামী আইন (Fiqh), হাদীস, তাফসীর বা ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষায়িত বিভাগ এখনো অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ ও গবেষণার সুযোগ সীমিত।

✓তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদ্রাসার অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ ইসলামী আইন ,কুরআন ,হাদিস ,তাফসীর, ফিকহ, অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। কোরানিক সাইন্স, ইত্যাদি নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

✓ইসলামী বিষয়গুলোতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এইসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে এতে করে বাংলাদেশের মুসলমানদের ইসলামিক জ্ঞানের অভাব পূর্ণ হবে সেই সাথে মানুষের নৈতিকতা বোধ জাগ্রত হবে।

 

✓কী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে

বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমে আধুনিক বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, ইংরেজি ও গণিত অন্তর্ভুক্ত করে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার টেকসই ও সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

 

✓প্রথমত, মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। অনেক মাদ্রাসা এখনও জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই নতুন ভবন নির্মাণ, ক্লাসরুমের সংখ্যা বৃদ্ধি, নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশন সুবিধা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

 

✓দ্বিতীয়ত, প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করা উচিত, যাতে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় সহায়তায় মানসম্মত ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা লাভ করতে পারে।

 

✓তৃতীয়ত, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে হবে, যাতে শিক্ষক ও কর্মচারীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মান আরও উন্নত হয়।

 

✓চতুর্থত, প্রতিটি মাদ্রাসায় একটি করে মানসম্মত লাইব্রেরি স্থাপন করা আবশ্যক। এতে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং জ্ঞানচর্চার পরিবেশ তৈরি হবে।

এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে মাদ্রাসা শিক্ষা একটি শক্তিশালী, যুগোপযোগী ও জাতীয় উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু ধর্মীয় শিক্ষার বাহক নয়; এটি একজন মানুষের নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক দায়িত্ব ও নেতৃত্বগুণ গঠনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উচিত মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এর উন্নয়নে সমন্বিত ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তাহলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন ও জ্ঞানসমৃদ্ধ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে, যা একটি কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

 

✒️রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺

কবি ও সাহিত্যিক।

👉আরবি: প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা

ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।

Gmail: islamiclecturer7@gmail.com

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page