ছামিউল ইসলাম রিপন (সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের গাজীপুর জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। মোঃ মনিরুল ইসলাম সরকারকে আহ্বায়ক এবং রুবেল রানাকে সদস্য সচিব করে নতুন এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।

গাজীপুরে আয়োজিত কমিটি গঠন উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মো. শান্ত ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুজ্জামান, সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

সাভায় বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী অধ্যাপকসহ সংগঠনটির মহাসচিব মো. শান্ত ইসলামের অগ্নি ঝরা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে দাবী আদায়ের জন্য শিক্ষকদেরকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষকদের যোগ্যতা অনুযায়ি ৮ম গ্রেড দিতে হবে, ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা প্রদান করতে হবে এবং মাদ্রাসায় জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিতে অধ্যক্ষ কিংবা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।
সভায় সংগঠনের মহাসচিব মো. শান্ত ইসলাম সভায় অন্যান্য বক্তার বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, “দাবি আদায় এমনি এমনি হয় না, আন্দোলন করে দাবী আদায় করতে হবে। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে এ দাবিকে সফল করতে। মাদ্রাসা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার যার মধ্যে জেনারেল শিক্ষকরা বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। উনি আরো বলেন, একই যোগ্যতা নিয়ে মাদ্রাসার বাংলা ,ইংরেজি, গণিত, আরবি,বিজ্ঞানসহ জেনারেল বিষয়ের শিক্ষকগণ ৮ম গ্রেডে যেতে পারে না, এটা একটা চরম বৈষম্য। বৈষম্য দুর করার জন্যই বর্তমান এই সরকার তারপরেও যদি বৈষম্য থাকে তাহলে রাজপথের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। আর এই বৈষম্য যারা টিকিয়ে রেখেছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে প্রশাসন থেকে অপসারণ করতে হবে। মো. শান্ত ইসলাম আরো বলেন, কলেজের প্রভাষকরা ১৬ বছরে সবাই সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন কিন্তু মাদ্রাসার প্রভাষকরা ১৬ বছর হওয়ার পরেও তারা সহকারী অধ্যাপক হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলীর বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। অনেক বক্তার বক্তব্যের সাথে একমত পোষন করে উনি বলেন, মাদ্রাসার প্রশাসনে দুইটি করে পদ থাকে সেখান থেকে জেনারেল শিক্ষকদের মধ্য থেকে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সুপার কিংবা সহ. সুপার এবং অধ্যক্ষ কিংবা উপাধ্যক্ষ একটি প্রশাসকি পদ নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে বৈষম্য অনেকাংশে কমবে। “আমরা সরকারকে সময় দিচ্ছি, দাবি বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আগামী এক মাসের মধ্যে প্রণয়ন করতে হবে। স্যার স্যার বলে দাবী আদায় করা যায় না, আমাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না অন্যথায় কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে মানববন্ধন, লংমার্চ এমনকি মন্ত্রনালয় ঘেরাও পর্য ন্ত করতে পারি।

সভায় বক্তারা দেশের মাদ্রাসা শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন:
১. সহকারী শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেড প্রদান:
বক্তারা বলেন, একই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্মঘণ্টা থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকরা এখনও অষ্টম গ্রেড থেকে বঞ্চিত। এটি একটি চরম বৈষম্য, যা অবিলম্বে দূর করতে হবে।

২. অবসর সুবিধা দ্রুত প্রদান:
তাঁরা জানান, মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরকালীন সুবিধা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই ভোগান্তি দূর করে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে অবসর ভাতাদি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

৩. প্রশাসনিক পদে উপাধ্যক্ষ/অধ্যক্ষ নিয়োগ:
বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন চাকরিতে থেকেও অনেক সিনিয়র শিক্ষক প্রশাসনিক পদে উন্নীত হতে পারেন না। এ পরিস্থিতিতে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে।

৪. দ্রুত বদলির সুযোগ নিশ্চিতকরণ:
শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে নেতারা বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের বহু শিক্ষক পরিবার থেকে দূরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকলেও বদলি হচ্ছেন না। দ্রুত ও ন্যায্য বদলির প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, গাজীপুর জেলার প্রতিটি মাদ্রাসার শিক্ষক সমাজকে সংগঠিত করে এই দাবীগুলো বাস্তবায়নে সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে মাদ্রাসা জেনারেল শিক্ষকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করে তাদের মর্যাদা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা হোক।