(সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী) প্রতিনিধি: এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটির গঠনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের পরিবর্তে সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিচালনা কমিটিতে সরকারী কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই নীতিমালার খসড়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং খুব শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার পরিচালনা কমিটিতে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিংবা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিরা থাকেন। ফলে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই উঠে আসে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
নীতিমালার মূল বৈশিষ্ট্য:
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে পরিচালনা কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর ফলে নিয়োগ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়বে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত ব্যক্তিদের ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে।
দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা: নীতিমালায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সদস্যদের জন্য নিয়মিত রিপোর্টিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শিক্ষক নিয়োগে নিয়ন্ত্রণ: শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হবে।
জবাবদিহিতা: বাৎসরিক অডিট ও কার্যক্রমের প্রতিবেদন শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য সুফল: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, নিয়োগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কামরুল ইসলাম বলেন, “বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকার যখন বেতন দেয়, তখন তাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও থাকা উচিত। এটি শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।”অনেক শিক্ষক সংগঠন এই পদক্ষেপকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষক স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে তারা বলছেন, শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে এমন নীতিমালা চাপিয়ে দিলে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সরকারের এই উদ্যোগটি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে আসবে, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বাড়বে এবং দীর্ঘদিনের নানা অসঙ্গতি দূর হবে বলে আশা করা যায়। তবে এটি বাস্তবায়নের আগে শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মতামত গ্রহণ জরুরি, যাতে এটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
You cannot copy content of this page