নেতৃত্ব গুণ হলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি বা জন্মগত। আর নেতৃত্বকে শাণিত করে জ্ঞানচর্চা ও অনুশীলন। আদর্শ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে যোগ্য নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিহার্য। সঠিক নেতৃত্বের ফলে একটি জাতি তার অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করতে পারে। আবার দুর্বল বা অযোগ্য নেতৃত্ব জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে।
এখন বিতর্কের ক্ষেত্র হলো এই নেতৃত্বের অনুশীলন হবে কোথায় এবং কিভাবে? অবশ্যই নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করতে হলে ছাত্রজীবন থেকেই এর অনুশীলন জরুরী। কিন্তু, এর প্রক্রিয়া কিংবা পন্থা হতে হবে এমন, যা সত্যিকার অর্থে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে।
আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি রয়েছে, তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য কি তা তারাই ভালো জানেন। তবে, তাদের যুক্তি হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করার জন্য রাজনীতি করা দরকার। ব্যাপারটা আমার কাছে যথেষ্ট হাস্যকর মনে হয়।
নেতৃত্ব হলো এমন একটি গুণ, যা মানুষকে তার আচরণের মাধ্যমে প্রভাবিত করে সুসংগঠিতভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা ও আত্মবিশ্বাস আর প্রত্যয়ের সঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালু করে এর ফায়দা নিচ্ছে এদেশের সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকার করার এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আজ এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।
পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতার পরে এ পর্যন্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট ১৫১ জন শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতির বলি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪ জন (প্রথম আলো, ১২ অক্টোবর, ২০১৯)
২০১৯ সালে বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মূলত দেশের নাগরিকগণ এ দাবিতে সোচ্চার। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এক জরিপে বুয়েটের ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে ভোট দেন (ইনকিলাব, ৪ এপ্রিল ২০২৪)।
নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। যেমন: নটরডেম কলেজে বিভিন্ন ধরনের ক্লাব কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষার্থীরা। এতে একদিকে সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং তার নেতৃত্বের বিকাশও ঘটে থাকে
জুলাই বিপ্লবের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতি মুক্ত রাখা। কিন্তু আফসোস, সে উদ্দেশ্য সফল করার পথে কেউ হাঁটছে না। কেউ কেউ আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্ন পন্থায় ছাত্র রাজনীতির পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন।
আমি রাজনীতির অতশত প্যাঁচ বুঝি না। শুধু এটা বুঝতে পারছি, এদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনীতি মুক্ত না করা সম্ভব হলে, আগামী প্রজন্মকে কোনভাবেই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে না। এদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে, নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে এই জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নাই।
মো: আরিফুজ্জামান,
এক্স নটরডেমিয়ান,
বিএসসি বিএড, এলএলবি,
সিনিয়র শিক্ষক,
ইন্দুরকানী মেহেউদ্দিন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পিরোজপুর
You cannot copy content of this page