জামালপুর প্রতিনিধিঃজামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২৩টি সমবায় সমিতির প্রায় ৩০ হাজার প্রতারিত গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত পেতে দ্বিতীয় দিনের মত উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছেন গ্রাহকেরা। আন্দোলন চলাকালে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নাগরিক সেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
২৪ জুন, মঙ্গলবার সকাল ৯টা দিকে আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলছিল। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে কয়েক হাজার ভুক্তভোগী গ্রাহক অংশ নেন।
জানা গেছে, উচ্চ মুনাফার আশায় ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা করেছিলেন প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক। প্রথম দিকে সমিতিগুলো গ্রাহকদের উচ্চ মুনাফা দিলেও ২০২২ সালের শেষের দিকে আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকরা আত্মগোপনে চলে যেতে শুরু করেন। এরপর থেকে প্রতারিত গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সমবায় সমিতির পরিচালকেরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর গ্রাহকেরা মাদারগঞ্জ থানা ও জামালপুরের আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। তবুও আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে তারা অফিসে এলেও উপজেলা পরিষদ ভবনের ফটকে বিভিন্ন সমবায় সমিতির গ্রাহকেরা অবস্থান নেয়ায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি এবং একপর্যায়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা গার্মেন্টস শ্রমিক লিটন মিয়া বলেন, নতুন ভোটার হয়েছি। অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দুদিনের ছুটি নিয়ে ভোটার আইডি কার্ড নিতে আসছি। গতকালও এসে দেখি অফিস তালাবদ্ধ। আজও সেই অবস্থা। গার্মেন্টসের অফিসে যদি ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে না পারি তাহলে আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিবে।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ে আসা মমিনুর রহমান বলেন, জমির দলিলের নকল নিতে এসেছি। দেখি সব বন্ধ। সব অফিস তালা মেরে রেখেছে। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অফিসে সেবা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। এগুলোর একটা সমাধান করা দরকার।
শতদল সমবায় সমিতির প্রতারিত গ্রাহক সোলাইমান হোসেন বলেন, আমরা দ্বিতীয় দিনের মত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। এর আগেও আমরা আন্দোলন করেছি। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মিথ্যা আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনে কর্মকর্তারা দেড় মাসেও তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। আমাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এবার দাবি মানা না হলে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, ‘সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বাতিল করলে, গ্রাহকেরা আরও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই নিবন্ধন বাতিল করা যাচ্ছে না। দেখুন, অনেক সভা ও মিটিং করা হয়েছে। সমিতির মালিকেরাও টাকা দিতে চাইছিলেন। কিন্তু টাকাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া হবে—এ বিষয়ে আন্দোলনকারীরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। ফলে ওই প্রক্রিয়াও এখন থেমে গেছে। এই মুহূর্তে আমাদের আর কিছুই করার নেই।’
জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন। আবার কিছু আন্দোলনকারী তাঁদের থামিয়েছেন। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে।
You cannot copy content of this page