বাংলাদেশে ‘সংস্কার’ শব্দটি রাজনৈতিক পরিভাষায় এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা প্রায়শই প্রকৃত অর্থকে আড়াল করে ফেলে। এক সরকার গেলে পরবর্তী সরকার আসে এবং দেখা যায়, আগের সরকারের স্থাপন করা সড়ক, হাসপাতাল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাল্টে দেওয়া হচ্ছে নতুন নামে। এসব নাম সাধারণত দলীয় নেতাকর্মী, তাঁদের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজনের নামে রাখা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই নাম পরিবর্তন কি আদৌ সংস্কারের আওতায় পড়ে?
নাম পরিবর্তন জনগণের জীবনে কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলে? যখন একটি সরকারি হাসপাতালের নাম বদল হয়, অথচ সেই হাসপাতালেই ওষুধ নেই, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, জরুরি যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে—তখন সেই নাম বদলের মানে দাঁড়ায় শুধু রাজনৈতিক প্রতীকী পরিবর্তন, বাস্তব কোনো সেবা উন্নয়ন নয়।
একই অবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রেও। দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন হয়, নতুন ফলক বসানো হয়, কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত পাঠদান, পর্যাপ্ত শিক্ষক বা গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত হয় না। বরং অনেক প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকরা ন্যায্য সম্মান ও সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থা।
তাঁদের মাসিক বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ১,০০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা। এই টাকায় বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এক মাসের বাসা ভাড়া বা চিকিৎসা খরচ চালানো নিতান্ত অসম্ভব। অথচ তারাই দেশের কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত। এই প্রেক্ষাপটে এটি খুবই দুঃখজনক যে, শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নের চেয়ে নামকরণ রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অথচ সংস্কার বলতে বোঝায় কাঠামোগত উন্নয়ন—যেখানে জনগণ সরাসরি সুফল পায়।
যেমন:
সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ্যবই, গবেষণা, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেওয়া,
শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য বেতন, ভাতা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।
দেশ কোনো দলের নয়—দেশ জনগণের। সংস্কারও দল নয়, জনকল্যাণ নির্ভর হওয়া উচিত।
তাই সময় এসেছে, নাম নয়—মান পরিবর্তনকে সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করার।
সংস্কার হোক শুধু ফলকে নয়, মানুষের জীবনে স্পষ্ট সুফল দেওয়ার বাস্তব অঙ্গীকারে।
শাহীন আহমদ
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর,
আল-আজম হাইস্কুল এন্ড কলেজ, বিশ্বনাথ, সিলেট।
You cannot copy content of this page