শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হলে শিক্ষক হচ্ছে শিক্ষার মেরুদণ্ড। শিক্ষকদের অবহেলা করে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন স্হানে নির্যাতিত,নিপীড়িত, ও নিগৃহীত হচ্ছেন। এটা সভ্য সমাজে অকল্পনীয়। একটি বৈষম্যহীন সমাজ বির্নিমাণ ছিল আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম অঙ্গীকার। স্বাধীনতার পরবর্তী দিনগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষকদের সাথে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছিল তা কল্পনাতীত। একই সিলেবাস, একই সময় পরীক্ষা, একই সময়ে ফলাফল ঘোষণা, সবকিছু সমভাবে প্রযোজ্য কিন্তু সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাগ করা হয়। ছাত্র ছাত্রীর সার্টিফিকেট কিংবা চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যদি সরকারি বেসরকারি ভাগ হত তাহলে ব্যথার কোন কারণ ছিল না। মাঝে মাঝে মনে হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকগণ সরকারের করুনার পাত্র। যেন সরকার খুব করুণা করে শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের প্রশ্ন হল কিন্তু কেন?
আজ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে শতকরা আশি ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে কিংবা অবহেলা করে পারবে না। শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চাইলে কিংবা আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে রূপান্তর করতে চাইলে অবশ্যই বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো বেশি গতিশীল আরো আধুনিক করতে হলে অবশ্যই সরকারি বেসরকারি বৈষম্য দুর করতে হবে।
বিশ্ব পরিস্থিতি বদলাচ্ছে পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্ব চাহিদা। আমাদের পেছনে রেখে অনেকে বেশ দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই যে এগিয়ে যাওয়া, এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে শুধুমাত্র একটা অস্ত্র বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে তাহল “শিক্ষা”। কারণ জাতির চালিকাশক্তি হচ্ছে শিক্ষা। এই চালিকা শক্তিতে যত মেধাবী ছাত্র আসবে, কর্ম জীবনেও আমরা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারব। না হয় রুগ্ন ব্যক্তি থেকে রুগ্ন ছেলেই জন্ম নেবে। পাঁচশত টাকা মেডিকেল, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ৫০%, ঈদ বোনাস, টুকরো টুকরো ভাবে আর্থিক অনুদানে সমস্যার সমাধান হয় না। এ সকলের মহৌষধ হল চাকরি জাতীয়করণ। এছাড়া কোন বৈষম্য দূর হবে না।
শিক্ষকদের মৌলিক দাবি হচ্ছে, চাকরি জাতীয়করণ। এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ জাতীয়করণ হলে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে সত্যিকারের জাতি গড়ার কারিগরে পরিণত হবে আশা করি।
পরিশেষে বলতে চাই, তৃষিত শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের তৃষ্ণা মেটানো যেমন সম্ভব নয়, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনও অসম্ভব প্রায়।
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক দলের নগ্ন থাবা থেকে রক্ষা করতে হলে চাকুরি জাতীয়করণের বিকল্প নেই। চাকুরিরত প্রায় ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর প্রাণের দাবি চাকুরী জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হযেছে।
জাতীয়করণের এই দাবিকে উপেক্ষা করা এখন আর কোন সুযোগ নেই। দেশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের এ জন্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, একদল আর্দশ শিক্ষকই পারে জাতির ভাগ্য উন্নয়নে পরিবর্তন করতে পারেন। আশা করি বৈষম্যমূলক শিক্ষকসমাজ গঠনে বর্তমান সরকার দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন।
লেখক: মাজহারুল আলম ভূঞা, যুগ্ন মহাসচিব, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো), কেন্দ্রীয় কমিটি।
You cannot copy content of this page