সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: দীর্ঘদিনের এক দাবি অবশেষে হাইকোর্টের নজরে এলো। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরির জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে এমপিওভুক্তির তারিখের পরিবর্তে প্রথম যোগদানের তারিখকে ভিত্তি ধরার বিষয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার ১ জুলাই বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। আদালত জানতে চেয়েছেন, কেন বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে প্রথম যোগদানের দিন থেকে গণনা শুরুর নির্দেশ দেওয়া হবে না।
রুল জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, “বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হয় এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে, যা অন্যান্য চাকরির জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
এই রিটটি দায়ের করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৮০ জন প্রভাষক, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তাদের দাবি, অন্য সব সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রথম যোগদানের দিন থেকেই চাকরির মেয়াদ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হয়। অথচ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়—এটি একটি অস্পষ্ট বৈষম্যের উদাহরণ।
রিটে সংবিধানের ২৭ ও ২৯ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়, যেখানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও সরকারি চাকরিতে সুযোগের সমতা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই অনুচ্ছেদগুলোর সরাসরি লঙ্ঘনের অভিযোগে রিটকারীরা হাইকোর্টে যান।
আইনজীবী ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া আরও বলেন, “এ রুলের শুনানি শেষে যদি আদালত রায় দেন যে, প্রথম যোগদানের তারিখ থেকেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে, তাহলে এটি বেসরকারি শিক্ষক সমাজের জন্য একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি হবে। দীর্ঘদিন ধরে যে অবিচার তারা সহ্য করে আসছেন, তার অবসান ঘটবে।”
শিক্ষা বিশ্লেষক ও সাবেক শিক্ষা সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, “একজন শিক্ষক যদি দশ বছর আগে যোগ দেন, কিন্তু এমপিও পান পাঁচ বছর পরে, তাহলে তাকে একজন নতুন শিক্ষকের নিচে রাখা সংগত নয়। এটি কেবল বৈষম্যই নয়, শিক্ষকদের মনোবলে আঘাতও হানে।”
এই রুলের শুনানি ও চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে তাকিয়ে আছেন দেশের লাখো বেসরকারি শিক্ষক। এটি শুধু একটি আইনি প্রশ্ন নয়—এটি ন্যায়বিচার, সমতা ও মর্যাদার প্রশ্ন। যদি প্রথম যোগদানের দিন থেকেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হয়, তবে শিক্ষক সমাজের মধ্যে প্রকৃত মর্যাদাবোধ ফিরে আসবে এবং নীতিগত এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
হাইকোর্ট রুল সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেন অ্যাডভোকেট মো. ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।
রিট নম্বর ও শুনানির পরবর্তী তারিখ আদালতের আদেশপ্রাপ্তির পর হালনাগাদ করা হবে।
You cannot copy content of this page