সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মানের অবনতি রোধে ১৫ দফা দাবিসংবলিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো)। ২ জুলাই বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাবেশিকফোর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন, মহাসচিব মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম খান, মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মো:আব্দুল হালিম,আমাতুন নাহার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মো:তোফায়েল সরকার ও আব্দুল হাই সিদ্দিকী এবং নির্বাহী সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম ফরিদ উদ্দীন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত প্রায় ৯৭ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ব্যবস্থায় পরিচালিত হলেও, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নানাবিধ অনিয়ম এবং বঞ্চনার কারণে শিক্ষার মান নিম্নগামী হচ্ছে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, শিক্ষকরা হচ্ছেন শিক্ষার মূল চালিকাশক্তি। তাই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষক সমাজের মর্যাদা, আর্থিক নিরাপত্তা এবং চাকরিজীবনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রস্তাবনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে—
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা শতভাগ করা এবং শ্রান্তি বিনোদন ভাতা চালু করা।
২. শিক্ষক বদলি ব্যবস্থায় এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্তদের পাশাপাশি সুপারিশবিহীন শিক্ষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন ও ফি নির্ধারণে একক নীতিমালা প্রণয়ন করা।
৪. গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা হ্রাস বা বাতিল করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা।
৫. আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন।
৬. প্রশাসনিক ও নন-টিচিং স্টাফ নিয়োগ কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ।
৭. প্রতিষ্ঠান প্রধানের যোগ্যতা নির্ধারণে ২০১০ সালের নীতিমালা পুনর্বহাল।
৮. উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক পদ পুনর্বহাল।
৯. বিএড স্কেল-সংক্রান্ত অসঙ্গতি দূর।
১০. সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেডে বৈষম্য নিরসন।
১১. ল্যাব সহকারীদের ১৮তম গ্রেড থেকে উন্নীত করে ১৬তম গ্রেডে উন্নীতকরণ।
১২. অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টকে ঢেলে সাজানো এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় না এনে স্বতন্ত্র পেনশন ব্যবস্থার দাবি।
১৩. প্রশিক্ষণ ব্যয়ের অপচয় রোধে দক্ষ প্রশিক্ষক দিয়ে পরিকল্পিত প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন।
১৪. নৈশপ্রহরীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় করে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি।
১৫. পর্যালোচনা কমিটিতে বাবেশিকফোর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি।
বৈঠকে মাননীয় উপদেষ্টা শিক্ষক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শ্রবণ করেন এবং কয়েকটি প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় রয়েছে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। বিশেষ করে উৎসব ভাতা ও বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি নীতিগত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাবেশিকফোর নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হবে যা আগামী দিনের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
You cannot copy content of this page