আমি শিক্ষক।
কিন্তু আমি আসলে এক যোদ্ধা,
যার হাতে নেই অস্ত্র—আছে শুধু একমুঠো চকের গুঁড়া আর বুকে গুমরে ওঠা স্বপ্ন।
প্রতিদিন ক্লাসে দাঁড়াই,
আশার কথা বলি, আলো দেখাই—
তবু নিজের ভিতরে জমা হতে থাকে একেকটা ক্লান্ত নিঃশ্বাস,
যার শব্দ সমাজ শোনে না,
রাষ্ট্র শোনে না,
শোনে না আমার নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাও।
আমাকে অপমান করা হয় যখন শিক্ষকতা পেশাকে শাস্তি বানানো হয়।
আমার মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় যখন বলে—
“ও তো এমপিও-ভুক্ত, ওর কীই বা পাওনা!”
আমি কিছু বলি না।
কারণ আমি জানি, আমার প্রতিবাদ মানেই ‘অসন্তোষ’,
আর নীরবতা মানেই ‘সহনশীলতা’র নাম দেওয়া হয় এখানে।
তবু আমি লড়ি—
চেয়ার নেই, বেতন নেই, ছুটি নেই, তবু আমি যাই।
আমি উপস্থিত থাকি প্রতিদিন,
যেন জাতির ভবিষ্যতের উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে যাই।
কিন্তু গভীরে, খুব গভীরে—
একটা ক্লান্তি জমে যায়।
একটা দীর্ঘশ্বাস প্রতিদিন বুক চিরে উঠে আসে—
একজন যোদ্ধার ক্লান্ত নিঃশ্বাস হয়ে।
শ্রদ্ধা চেয়েছি, করুণা না।
অধিকার চেয়েছি, দয়া না।
কিন্তু এই রাষ্ট্র, এই সমাজ—
আমার চাওয়া বোঝে না,
শুধু বোঝে, শিক্ষক মানেই সব সহ্য করা এক পাথরচাপা মানবিকতা।
আমি জানি,
এই নিঃশ্বাস আজ হয়তো কেউ শুনবে না—
তবে যেদিন এই আগুন ছড়িয়ে পড়বে,
সেদিন আর কেউ বলতে পারবে না—
“শিক্ষকরা চুপ ছিল”।
আমি শিক্ষক—শ্রেণিকক্ষে শান্ত,
কিন্তু আমার নিঃশ্বাসে আগুন জমে থাকে।
আর সেই আগুনই একদিন অন্যায়ের পর্দা পুড়িয়ে ফেলবে।
তানজিম হোসাইন
শিক্ষক | সাংবাদিক
You cannot copy content of this page