• সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে নিহত ৩। হাটহাজারীতে স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত। থানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ধামইরহাটে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন মানিকগঞ্জে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৫ নওগাঁয় অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার ৮ ধাপে আবেদন ফরম পূরণ ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির “সর্বজনীন পেনশন নয়, সরকারি পেনশনই চাই” — আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। ভালুকায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বাকবিশিস’ ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ

“অবসরে গিয়েও অবসর নেই: প্রাপ্য টাকার অপেক্ষায় ৯৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর কান্না”

ছামিউল ইসলাম রিপন / ২৭০ বার দেখা
আপডেট : শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫

সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: বরিশালের বাকেরগঞ্জের দুধল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বশির আহম্মদ শিকদার ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর অবসরে যান। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসর সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এরই মধ্যে সাড়ে চার বছর কেটে গেছে, আজও অবসর সুবিধার অর্থ হাতে পাননি তিনি। বয়সের ভারে ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত এই শিক্ষক অবসরকালীন প্রাপ্য অর্থের অপেক্ষায় আজ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার।

এই দুরবস্থা শুধু বশির আহম্মদের একার নয়। একই রকম অবস্থা রংপুরের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মমতাজুল ইসলামেরও। তিনি ২০২১ সালের জুনে অবসর সুবিধা বোর্ডে আবেদন করেন, কিন্তু আজও তার প্রাপ্য টাকা মেলেনি।

এমন চিত্র গোটা দেশের প্রায় ৯৪ হাজার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে টাকা না পেয়ে বহু শিক্ষক-কর্মচারী পড়েছেন চরম সংকটে। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কেউ আবার মৃত্যুবরণ করেছেন, অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেননি।

অবসর সুবিধার এই বিশাল জটিলতা নিরসনে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানা গেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি, তারা চাকরিজীবনে বেতনের একটি বড় অংশ নিয়মিত কেটে জমা দিয়েছেন অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে। অথচ অবসরে গিয়ে তারা সেই অর্থের জন্য বছরের পর বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

রাজধানীর পলাশীস্থ ব্যানবেইস ভবনে প্রতিদিনই ভিড় করছেন এসব অসহায় শিক্ষক-কর্মচারী। কেউ তথ্য নিতে, কেউ আবার বকেয়া পাওনার অনুরোধ জানাতে। সম্প্রতি কথা হয় তুরাগের কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক মো. মহসীনের সঙ্গে। তার মেয়ে মোহসিনা আফরোজ মিশু একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ২০২২ সালের এপ্রিলে অবসরে যাওয়া মহসীন শিক্ষক জানালেন, অর্থাভাবে মেয়ের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকুও করাতে পারছেন না তিনি। কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার অনুরোধ করেও মেলেনি কোনো আশ্বাস।

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি:
• আবেদনের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দ্রুত অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা।
• বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
• স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অনলাইনে আবেদন ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা।
• আর্থিক দুর্বল শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ জরুরি তহবিল গঠন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিজীবনে মূল বেতনের ৬% অবসর সুবিধা বোর্ডে ও ৪% কল্যাণ ট্রাস্টে জমা রাখার নিয়ম রয়েছে। এই অর্থের সঙ্গে সরকারের নির্ধারিত অংশ মিলিয়ে অবসরে গেলে প্রাপ্ত সুবিধা হিসেবে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক বছরে সরকারি বরাদ্দে ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতায় এই প্রক্রিয়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একজন শিক্ষক যখন টাকার অভাবে চিকিৎসা বঞ্চিত হন বা পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হন, তখন তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়—সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার মানবিক ব্যর্থতা। অবসরপ্রাপ্ত ৯৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর এই করুণ বাস্তবতা এখনই সমাধান না হলে, শিক্ষক পেশার প্রতি আগ্রহ হারাবে আগামী প্রজন্মও। সময় এসেছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page