• সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে নিহত ৩। হাটহাজারীতে স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত। থানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ধামইরহাটে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন মানিকগঞ্জে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৫ নওগাঁয় অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার ৮ ধাপে আবেদন ফরম পূরণ ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির “সর্বজনীন পেনশন নয়, সরকারি পেনশনই চাই” — আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। ভালুকায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বাকবিশিস’ ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ

শিক্ষক মর্যাদার লাশ: জাতির বিবেকের মুখে থাপ্পড়

প্রতিনিধির নাম / ৪৪ বার দেখা
আপডেট : রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫

“শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড”—
এই বাক্যটি আমরা মুখস্থ করেছি, ব্যবহার করি বক্তৃতায়, লিখি দেয়ালে।
কিন্তু সেই মেরুদণ্ড যারা গড়ে দেন—শিক্ষক—তাদের জীবনচিত্র কী?

এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা মাস শেষে হিসেব মিলাতে পারেন না,
বাড়িভাড়া ভাতা নেই, চিকিৎসা ভাতা নেই, সময়মতো বেতন নেই।
কিন্তু ক্লাসে ঢুকলে তাকে বলা হয় “স্যার”—
আর সমাজ গর্বে মাথা তোলে,
যদিও সেই “স্যার” রাতে নিজ সন্তানকে বলে—
“বাবা, আজ আর দুধ হল না, কাল আনার চেষ্টা করবো!”

বাংলাদেশে এখনো কয়েক লাখ শিক্ষক এমন বিদ্যালয়ে কাজ করেন
যেখানে শৌচাগার নেই, প্রয়োজনীয় পাঠদান সামগ্রী নেই,
এমনকি ন্যূনতম সম্মানজনক কর্মপরিবেশও নেই।
তবু তাদের মুখ বন্ধ—কারণ তারা “আদর্শ” পেশার মানুষ।

রাষ্ট্রভাষণে, বাজেট বক্তৃতায়, উন্নয়ন প্রচারণায় শিক্ষক নিয়ে ঢাক পেটানো হয়।
কিন্তু শিক্ষক যখন ন্যায্য দাবি তোলে, তখন তার গলা চেপে ধরা হয়।
দেখানো হয়, এই দাবি “অনৈতিক”—শিক্ষকের নাকি চুপ থাকাই মানায়!

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরির শুরুতেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান,
একজন অফিসার পান গাড়ি, বাড়ি, ভাতা—
আর একজন শিক্ষক যিনি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন, তিনি কী পান?

👉 পুরস্কার হিসেবে শুকনো ফুলের তোড়া,
👉 সংবর্ধনায় প্লাস্টিকের ক্রেস্ট,
👉 আর মাস শেষে দোকানে বাকির খাতা!

এই পরিস্থিতি কেবল অবহেলা নয়—এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
কারণ, যে জাতি নিজের শিক্ষকদের ন্যায্য সম্মান দেয় না,
তার ভবিষ্যৎ কখনো গৌরবময় হতে পারে না।

🛑 এবার প্রশ্ন উঠতেই হবে:

শিক্ষক কি দান খেয়ে চলা পেশাজীবী?

কেন তারা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো মর্যাদা পাবে না?

কেন তাঁদের বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা সহায়তা, অবসরের নিশ্চয়তা থাকবে না?

এই রাষ্ট্র যদি সত্যি উন্নয়নমুখী হতে চায়,
তবে প্রথম বিনিয়োগ করতে হবে শিক্ষকের ওপর।
পদক না, ফুল না—শিক্ষক চান অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পেশাগত মর্যাদা,
আর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বাস্তব প্রাপ্তি।

সমাধান স্পষ্ট:
সমস্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষককে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করতে হবে।

বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে।

উপজেলা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় শিক্ষকদের জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্স ও রিটায়ারমেন্ট সিকিউরিটি চালু করতে হবে।

“সংবর্ধনার পলিসি” নয়—চাই মর্যাদার বাস্তব রূপরেখা।

একজন শিক্ষক যখন কাঁদেন, তখন শ্রেণিকক্ষে আলো কমে যায়।
একজন শিক্ষক যখন ক্ষুব্ধ হন, তখন ভবিষ্যৎ দিক হারায়।
তাদের সম্মান দিলে জাতি মাথা তুলে দাঁড়াবে—
আর সম্মান না দিলে, আমরা সবাই একদিন কুঁকড়ে মরা এক সমাজে বেঁচে থাকবো,
যেখানে ভবিষ্যৎ গড়ার কেউ থাকবে না।

তানজিম হোসাইন
শিক্ষক | সাংবাদিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page