সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফল বিপর্যয় নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মহলে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী কে? শিক্ষক, শিক্ষার্থী না পারিপার্শ্বিক সামাজিক পরিবেশ?
অনেকে মনে করছেন, কেবলমাত্র শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। একজন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে পারে তখনই, যখন তার মধ্যে অধ্যবসায় থাকবে, পরিবারের পক্ষ থেকে থাকবে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতির প্রতি থাকবে সম্মান ও আস্থা।
যদিও শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করেছেন, কোচিং বা প্রাইভেটেও সময় দিয়েছেন, তবুও অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল না সঠিকভাবে গ্রহন করার মানসিকতা। বর্তমান সময়ে শাসনের পরিবর্তে শিক্ষকরা অনেকটাই নিরুৎসাহিত। শিক্ষার্থীদের শাসন করলে হুমকি, অপদস্থ হওয়া কিংবা সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে অনেক শিক্ষক শাসনের কৌশল থেকেও নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন।
এছাড়া দীর্ঘদিন প্রশ্নফাঁস, অটোপাশ সংস্কৃতি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করেছে এক ধরনের উদাসীনতা। অনেকেই ভাবেন, না পড়েও পাশ বা ভালো গ্রেড পাওয়া সম্ভব। এই ধারণা শিক্ষার প্রতি আন্তরিকতা কমিয়ে দিয়েছে।
শুধু শিক্ষক নয়, অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক পরিবারে শিক্ষার্থীদের হাতে কম বয়সেই তুলে দেওয়া হচ্ছে স্মার্টফোন, বাইক কিংবা নানা ধরনের গ্যাজেট। ফলে তারা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গিয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আবার অনেক সময় অভিভাবকরা সন্তানের রেজাল্ট খারাপ হলে শিক্ষকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, কিন্তু শিক্ষকের পরামর্শ মানেন না কিংবা মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও যথাযথ সম্মানজনক বেতন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা পেশাগত জীবনে আরও মনোযোগী হতে পারেন। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। শিক্ষকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং সন্তানের ওপর অপ্রয়োজনীয় প্রেশার না দিয়ে তাকে মানসিকভাবে সহায়তা করতে হবে।
এ প্লাস নয়, চাই প্রকৃত শিক্ষা। বর্তমান সময়ে ‘এ’ প্লাস পাওয়া মানেই মেধাবী আর না পাওয়া মানেই ব্যর্থ—এই ধারণা থেকেই বেরিয়ে আসতে হবে। একটি খারাপ রেজাল্ট মানেই জীবনের সমাপ্তি নয়। অনেক সময় ফেল করা শিক্ষার্থীও পরবর্তীতে চেষ্টা করে সাফল্য পেয়েছে। তাই সন্তান রেজাল্ট খারাপ করলে তাকে অপমান না করে পাশে থাকতে হবে, অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
যদিও এবারের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্নফাঁস বা বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে ফলাফলে ব্যতিক্রম ধারা লক্ষ্য করা গেছে। প্রশাসন ফলাফল বিশ্লেষণ করে কোথায় সমস্যা হয়েছিল, তা চিহ্নিত করলে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে।
এসএসসি ফলাফলের দায় এককভাবে শিক্ষকদের ওপর চাপানো অনুচিত। শিক্ষার্থীদের মনোভাব, পরিবারিক পরিবেশ এবং সামাজিক ও ডিজিটাল চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করে একটি সমন্বিত শিক্ষা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা শুধু রেজাল্টের খাতায় নয়—মানসিক, নৈতিক ও সামাজিকভাবে মানুষ গড়ে তোলাই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য।
You cannot copy content of this page