যাচাই-বাছাই চলছে ১৬টি দেশের শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে। কোনো দেশ ‘মডেল’ হলে, তার পাঠ্যক্রম চালু করার তোড়জোড় শুরু হবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—শুধু পাঠ্যবই নয়, সেসব দেশের শিক্ষকদের সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধাও কি আমদানি করতে প্রস্তুত সরকার?
আমাদের শর্ত একটাই—আপনি যদি ফিনল্যান্ডের কারিকুলাম নিতে চান, তবে ফিনল্যান্ডের মতো বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদাও নিশ্চিত করুন। কোরিয়ার বই আনবেন, কিন্তু শিক্ষকদের এমপিও বেতন আটকে রাখবেন—এটা তো অবিচার।
যেসব দেশে শিশু-কিশোরদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয় খেলনার মতো করে, সেই দেশগুলো শিক্ষকদেরও রাখে সমাজের শ্রেষ্ঠ আসনে। আর আমাদের এখানে? মাসের ১৪ তারিখেও বেতন হয় না। পূর্ণ উৎসব ভাতা নেই, চিকিৎসা ভাতা নেই, বাড়িভাড়া নেই। অথচ সেই শিক্ষককে দিয়ে বিশ্বমানের কারিকুলাম শেখাতে চান!
আধুনিক পাঠ্যবইয়ের আগে প্রয়োজন—আধুনিক ভাবনা, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি। শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন, মর্যাদা এবং মানবিক জীবন নিশ্চিত না করে যেকোনো উন্নত দেশের কারিকুলামই এখানে এসে মুখ থুবড়ে পড়বে।
শিক্ষা আমদানি করুন, প্রশিক্ষণ দিন, উন্নত বিশ্বের চিন্তা নিন—তাতে আপত্তি নেই। তবে মনে রাখবেন, টেক্সটবুক দিয়ে ট্যালেন্ট হয় না। আর ট্যালেন্ট তৈরি হয় শিক্ষক দিয়ে—যিনি বাঁচবেন, বাঁচাবেন, আর ভবিষ্যৎ গড়বেন।
শিক্ষকের প্রতি এই অবহেলা চলতে পারে না। যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদের উচিত আগে পদত্যাগ করে শিক্ষকের জীবন যাপন করা—তারপর নতুন কারিকুলাম নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া।
মো: তানজিম হোসাইন
কলামিস্ট, শিক্ষক ও সাংবাদিক
You cannot copy content of this page