সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি:সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নসহ চার দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ১৭ জুলাই (বুধবার) সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা হাজারো শিক্ষক ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। শিক্ষক নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা নীতিমালার আলোকে শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন কাঠামোর কথা বলা হলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
চার দফা দাবি:
১. সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডে বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা।
২. ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সকল প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সরকারি আদেশ (জিও) প্রদান।
৩. চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান।
৪. সকল শিক্ষককে স্বতন্ত্র স্কেল ও বেতন কাঠামোর আওতায় আনা।
বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার। তাদের মধ্যে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি। তারা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হলে প্রাথমিক স্তরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সেখানে যারা প্রথম সারিতে কাজ করেন, সেই শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. জিয়াউল হক বলেন, “শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের কথা বললে আগে শিক্ষকদের মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আর তার জন্য ন্যায্য বেতন কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
শিক্ষানীতির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি-
২০০০, ২০১০ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষক পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ করে তুলতে স্বাধীন স্কেল বা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন যেমন- ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন এবং মহম্মদ মনসুরুল হক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টেও প্রাথমিক শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, একাধিক সরকার এই বিষয়ে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যত কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষক নেতারা এটিকে অবহেলা ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের চিহ্ন হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, “শিক্ষকদের দাবিগুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। বাজেট ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার সাথে সমন্বয় করে ন্যায্য সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
তবে শিক্ষকরা বলছেন, শুধু আশ্বাসে নয়, বাস্তব পদক্ষেপে তারা বিশ্বাস করেন। তাই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষা উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের দাবি পূরণ শুধুমাত্র তাদের অধিকার নয়, এটি জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে একটি সময়োপযোগী, বাস্তবসম্মত ও মানবিক বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠাই পারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে সত্যিকার অর্থে গুণগত মানে উন্নীত করতে।
You cannot copy content of this page