• শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
হাটহাজারীতে স্লুইসগেটের পুনঃনির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত। থানা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ধামইরহাটে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন মানিকগঞ্জে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৫ নওগাঁয় অজ্ঞাত মহিলার লাশ উদ্ধার ৮ ধাপে আবেদন ফরম পূরণ ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির “সর্বজনীন পেনশন নয়, সরকারি পেনশনই চাই” — আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। ভালুকায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বাকবিশিস’ ৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ আজ পহেলা মে, মহান মে দিবস

“শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের সমাবেশ: চার দফা দাবিতে উচ্চকণ্ঠ”

ছামিউল ইসলাম রিপন / ১০৭ বার দেখা
আপডেট : শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: জাতীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকরা তাদের দীর্ঘদিনের পেশাগত বৈষম্য ও অবহেলার প্রতিবাদ জানিয়ে চার দফা দাবি তুলে ধরেছেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বেতন গ্রেড সংশোধন, পদোন্নতির জিও জারি, সিনিয়রদের অগ্রাধিকার এবং উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিতকরণ।

চার দফা মূল দাবি:

১. সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন-ভাতা প্রদান:
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। অথচ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা অনেকেই ১১তম গ্রেডে বেতন পান। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মতে, সহকারী শিক্ষকরা দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাখাতের দায়িত্ব পালন করলেও তারা এখনও “কম বেতনের পেশা” হিসেবেই চিহ্নিত। তাদের দাবি, এই অবস্থার পরিবর্তনে দ্রুত ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে হবে।

২. ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সব প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডে পদোন্নতির সরকারি আদেশ (জিও) জারি:
২০১৪ সালের মার্চ মাসে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড প্রদান করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। মাঠপর্যায়ে কর্মরত শিক্ষকদের অভিযোগ, অনেকেই দায়িত্ব পালনে দক্ষতা প্রমাণ করলেও তারা বঞ্চিত থাকছেন এই পদোন্নতি থেকে। এজন্য একটি স্পষ্ট ও কার্যকর জিও (সরকারি আদেশ) জারির দাবিতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

৩. চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা:
প্রায়শই দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী শিক্ষককে ‘চলতি দায়িত্ব’ দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হয়। কিন্তু বছরের পর বছর এই দায়িত্ব পালনের পরও তারা স্থায়ীভাবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এতে কর্মপ্রেরণায় ভাটা পড়ে এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হন। তাই আন্দোলনকারীদের দাবি, যারা চলতি দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান:
সরকারি চাকরিতে কর্মরত অন্যান্য ক্যাডার বা গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের মতোই প্রাথমিক শিক্ষকদেরও চাকরির নির্দিষ্ট সময় পরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ন্যায্যতা রয়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ১০ বছর পূর্তিতে টাইম স্কেল এবং ১৬ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হোক।

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত আছেন। এদের বেশিরভাগই গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার মূল কারিগর। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষক মর্যাদা ও পেশাগত উন্নয়নের কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায়, তারা বৈষম্য ও উপেক্ষার শিকার হন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনগুলো বারবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই শিক্ষক সমাজের ন্যায্য অধিকার ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রাথমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবি শুধু তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয়; বরং এটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোকে আরও দৃঢ় ও টেকসই করার একটি বড় পদক্ষেপ। সরকার যদি শিক্ষক সমাজের এই যুক্তিযুক্ত দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়, তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করা যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

You cannot copy content of this page