রাজধানী ঢাকায় শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব মাহফুজ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেন, “জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
সিদ্দিক জোবায়েরের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মূল অভিযোগ, তিনি সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং দীর্ঘদিন তাঁর আর্থিক সহযোগী তথা ‘ব্যক্তিগত ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়া, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ের সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সরকার পতনের পরও তিনি প্রশাসনিক পদে বহাল ছিলেন—যা শিক্ষার্থীদের মতে, “অবৈধ ক্ষমতার ধারাবাহিকতা”।
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ও শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষোভ দানা বাঁধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “একজন বিতর্কিত ও সুবিধাবাদী ব্যক্তিকে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য লজ্জার।”
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। তারা “পদত্যাগ চাই”, “দুর্নীতিবাজ শিক্ষা সচিব হটাও”—ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে তোলে গোটা এলাকা। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকলে কর্তৃপক্ষ সচিবালয়ের প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। ফলে সচিবালয় সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে।
২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সিদ্দিক জোবায়েরকে চুক্তিভিত্তিক সিনিয়র সচিব পদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী, অন্যান্য পেশাগত সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে এ নিয়োগ কার্যকর করা হয়। তবে নিয়োগের শুরু থেকেই তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বিতর্কিত অতীত ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছিল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও শিক্ষাবান্ধব চিন্তাধারার মানুষকে নয়, বরং রাজনৈতিক অনুগত ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে, যা শিক্ষানীতির অপমান।”
জনপ্রশাসন কমিটির একাধিক সূত্রে জানা যায়, সরকারের অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও সিদ্দিক জোবায়েরকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল। তবে প্রকাশ্য বিক্ষোভ ও সচিবালয় অবরোধের মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছানোয় সরকার আর সময়ক্ষেপণ করতে পারেনি।
শিক্ষার্থীরা এ প্রত্যাহারকে তাদের আন্দোলনের প্রথম জয় হিসেবে দেখছেন। তবে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন—“শুধু ব্যক্তিপর্যায়ে পরিবর্তন নয়, আমরা চাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাঠামোগত সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক ও শিক্ষাবান্ধব নীতি।”
এই ঘটনায় একদিকে প্রশাসনিক নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হয়েছে।
You cannot copy content of this page