একটি পাত্র। কিছু খালি হাত। ক্ষুধার্ত চোখে মৃত্যু ঠেলে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। এই ছবিটা শুধু গাজার নয়—এটা সভ্যতা নামক ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দেওয়া এক নির্মম প্রতিচ্ছবি।
গাজা এখন আর কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কবরস্থান। যেখানে বোমা নয়, ক্ষুধা এখন প্রধান ঘাতক। অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ জনে, যার অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।
ইসরাইলি অবরোধ, মানবিক সহায়তা বন্ধ, খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ নিষিদ্ধ—সব মিলিয়ে গাজা আজ এক ঘূর্ণিবায়ুর মধ্যে আটকে পড়া জীবনের নাম। রুটি চাওয়াও সেখানে এখন এক অপরাধ, আর পানি চাইলে জবাব আসে গুলি অথবা নীরবতা।
সবচেয়ে বড় বিষাদের নাম—মিডিয়া নেই। বিশ্ব গণমাধ্যম নেই। গাজা যেন পৃথিবীর মানচিত্রেই নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও ছড়ালেও তা মুহূর্তেই সেন্সর হয়ে যাচ্ছে। যেন কেউ-ই চায় না আমরা জানি—মানুষ না খেয়ে মরছে, কেউ খাবার চাইছে আর জবাবে আসছে কাঁটা তারের ধাক্কা।
ইসরাইলের নৃশংসতা এখন নিছক সহিংসতা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। যেখানে অস্ত্র ছাড়াই মানুষকে নিঃশেষ করা হচ্ছে ক্ষুধার মতো নীরব ও নিষ্ঠুর উপায়ে। অথচ তথাকথিত সভ্য বিশ্ব, নোবেলজয়ী রাষ্ট্রপ্রধানরা—সবাই চুপ।
কেউ বলছে, “আমরা গভীর উদ্বিগ্ন”, আবার কেউ বলছে “দুই পক্ষেরই দোষ রয়েছে।”
কিন্তু বলুন তো, একজন শিশু যখন খাবারের জন্য কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে—তখন কী তার কোনো পক্ষ থাকে?
গাজার রক্তে আজ ইতিহাস ডুবে গেছে।
নাম রেখেছে মানবতা, কাজ করছে পাষণ্ডতা।
আর এই সময়ে আমাদের চোখ মেলে তাকানো ছাড়া উপায় নেই।
কারণ আজ গাজা, কাল হয়তো আরও কোনো ‘গাজা’ আমাদের দরজায় কড়া নাড়বে।
মো: তানজিম হোসাইন
কলামিস্ট, শিক্ষক ও সাংবাদিক
You cannot copy content of this page