সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের এক প্রত্যাশা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আদেশ (১২৪/২০২২ নম্বর সিভিল রিভিউ পিটিশন) অনুসরণ করে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেড থেকে উন্নীত করে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় সরকার এখন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জন্য একই রকম সুবিধা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে মোট ৬৫,৫০২ জন প্রধান শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন, তারা এতদিন ১১তম গ্রেড এবং যারা প্রশিক্ষণবিহীন ছিলেন, তারা ১২তম গ্রেডে বেতন পেতেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, এই দুই ধরণের শিক্ষকদের সবাই এখন থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন পাবেন।
এতে প্রধান শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। এটি শুধু তাদের আর্থিক স্বস্তিই নয়, পেশাগত মর্যাদাও বাড়াবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের বিশ্বাস।
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনসহ বিভিন্ন শিক্ষক মহল দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন করে আসছিলেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে তাঁরা তাদের আন্দোলনের এক গৌরবময় অর্জন হিসেবে দেখছেন। শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকার প্রধান শিক্ষকদের দাবিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে যেভাবে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।”
এই সিদ্ধান্ত কেবল প্রধান শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক গুণগত মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেতন গ্রেড উন্নীত হওয়ার ফলে প্রধান শিক্ষকরা পেশাগতভাবে আরও উৎসাহিত হবেন, যা তাদের নেতৃত্ব ও স্কুল ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
সরকার আশা করছে, প্রধান শিক্ষকগণ অন্যান্য সহকারী শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের শিখন-ফল উন্নয়নে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।
শিক্ষানীতির বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদা আফরোজ বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে একজন প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা শুধু প্রশাসনিক কাজ নয়, শিক্ষকতার দিক থেকেও নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তাই তাঁদের বেতন কাঠামোকে মর্যাদাসম্পন্ন করাটা ছিল সময়ের দাবি।”
সরকারের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে। শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে তা শিক্ষার্থীদের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আশা করা যায়, প্রধান শিক্ষকগণও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে সক্রিয় হবেন।
You cannot copy content of this page