দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক ছুটির সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৭৬ দিনের মতো ছুটি থাকে, তবে তা কমিয়ে ৫৬ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব উঠেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন সময়ের অঘোষিত ছুটি, আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়া এবং শিক্ষার মানের অবনতি।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) বেগম বদরুন নাহার। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ছুটি কমানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হলেও, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এখনো এ বিষয়ে সম্মতি দেয়নি।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অপ্রত্যাশিত ছুটি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কমিয়ে দিচ্ছে, যা তাদের শেখার গতিকে মন্থর করে দিচ্ছে। শিক্ষার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ও পাঠদান কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে বার্ষিক নির্ধারিত ছুটি কমানোর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাঠপর্যায়ের শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ এবং বাস্তব পরিস্থিতির মূল্যায়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, পাঠদানের ধারাবাহিকতা ও মান উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে যে, আগস্ট মাস থেকে দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শনিবারেও খোলা রাখা হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আলোচনাই হয়নি।
মাউশির উপপরিচালক মো. ইউনুছ ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, “শনিবার ছুটি বাতিল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা বা প্রস্তাবনা নেই। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।”
উল্লেখ্য, দেশের স্কুলগুলো বর্তমানে সপ্তাহে পাঁচদিন পাঠদান করে। এর বাইরে অতিরিক্ত ছুটির কারণে সিলেবাস সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে আগেই শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শনিবার ক্লাসের কথা উঠলেও সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি বা চূড়ান্তভাবে আলোচ্য নয়।
সংশ্লিষ্ট মহলগুলো বলছে, যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আকারে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে গুজব ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার বার্ষিক ছুটি পুনর্বিন্যাসের চিন্তা করছে। যদিও বিষয়টি এখনো প্রাথমিক আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, তবে একে ঘিরে শিক্ষানীতি ও বাস্তবতাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
You cannot copy content of this page