বিশেষ প্রতিনিধি : আনন্দমোহন কলেজের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয় কালা ভাই শুধু একজন দারোয়ান নন, তিনি যেন কলেজের ইতিহাসেরই এক জীবন্ত অধ্যায়। প্রায় দুই দশক ধরে গেট পাহারা দিয়ে আসা এই মানুষটির মুখে সারাক্ষণ লেগে থাকে এক স্নিগ্ধ হাসি। ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে তিনি ‘কালা ভাই’ নামেই পরিচিত, আর এই নামেই যেন তৈরি হয়েছে এক আত্মিক বন্ধন।
কালা ভাইয়ের পূর্ণ নাম কালাচাঁদ মিয়া। বয়স পেরিয়েছে ষাটের কোটায়, তবু কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর শরীরের শক্তিতে এখনও পিছিয়ে নেই। ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই তিনি হাজির হন কলেজ ফটকে, আর দিন ফুরোলে তবেই বিদায় নেন। কলেজে আগত প্রত্যেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক কিংবা অভিভাবক—সবার মুখেই এক অভিন্ন কথা, “কালা ভাই আছেন বলেই আমরা নিশ্চিন্ত।”
ছাত্রদের কার কী সমস্যা, কে কখন কোন হলে ক্লাস করে—সব তার মুখস্ত। কোনো ছাত্র ফটকে বই ফেলে গেলে কিংবা কেউ অসুস্থ বোধ করলে, সবার আগে ছুটে যান কালা ভাই। গেটের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি তিনি হয়ে উঠেছেন এক পরোক্ষ অভিভাবক। মাঝে মধ্যেই দেখা যায়, তিনি নিজের টাকায় কিনে দেন কোনো অসহায় ছাত্রের জন্য বিস্কুট কিংবা ওষুধ।
অনেক সময় দেখা গেছে, কলেজে বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে কালা ভাই নিজের উপস্থিতি আর অভিজ্ঞতা দিয়ে সামাল দিয়েছেন পরিস্থিতি। প্রশাসনের চোখে তিনি দায়িত্বশীল, শিক্ষকদের কাছে শ্রদ্ধার, আর ছাত্রদের কাছে এক অভয় দাতা।
প্রশ্ন করলে বিনয়ী কণ্ঠে বলেন, “এই কলেজটাই আমার সংসার। ছাত্রছাত্রীর মুখ দেখে ভালো থাকি। যতদিন বাঁচি, কাজটা করে যেতে চাই।”
তার এই কথায় মিশে থাকে মমতা, দায়িত্ব আর ভালোবাসা।
কালা ভাইয়ের মতো মানুষরা হয়তো পত্রিকার হেডলাইন হন না, তবু তারা প্রতিদিনই নির্মাণ করে চলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নীরব ভিত্তি। আনন্দমোহন কলেজ গর্ব করতেই পারে তার মতো একজন অনুগত কর্মীকে নিয়ে।
You cannot copy content of this page