কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে স্থানীয় আদালত। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য নিজের কন্যাকে হত্যার অভিযোগে বাবাসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বিপ্লব। এ ছাড়াও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মামলার রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, কারণ তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন করিমগঞ্জ উপজেলার ভাটিয়া জহিরকোনা গ্রামের মৃত আবদুল মোতালিবের ছেলে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, খুরশিদ মিয়া এবং মেনু মিয়ার ছেলে সাদেক মিয়া। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট আনোয়ারুল ইসলামের ১২ বছর বয়সী মেয়ের মরদেহ বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই ১৬ জনকে আসামি করে করিমগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আনোয়ারুল ইসলাম।
তদন্তে উঠে আসে যে আনোয়ারুল ইসলাম প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজেই মেয়েকে হত্যা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার এসআই মীর মোহাম্মদ মোখছেদুল আলম ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, আনোয়ারুল ইসলাম তার ভাই খুরশিদ মিয়া এবং ভাতিজা সাদেক মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন।
বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজ এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এই রায়ে বিচারকের মন্তব্যে উঠে আসে যে, পিতার এমন কাজ সমাজে একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সমাজবিজ্ঞানীরা এই ঘটনার নৈতিক ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ একটি পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কিভাবে একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন কেড়ে নিতে পারে তা এই ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, এই রায় সমাজে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে। তবে, আসামিদের পলাতক অবস্থায় থাকায় রায় কার্যকর করতে বেগ পেতে হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আসামিদের গ্রেফতার করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটি সমাজে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এ ধরনের অপরাধ থেকে সাবধান থাকতে এবং পারিবারিক সমস্যাগুলো গঠনমূলক পথে সমাধান করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আগামীতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এছাড়াও, বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা তৈরি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই রায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
You cannot copy content of this page