এম.পি.ওভুক্ত শিক্ষকগণ যেন সমাজের সেই বিস্মৃত অধ্যায়, যারা বছরের পর বছর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন, অথচ তাদের কণ্ঠের আর্তনাদ কেউ শোনে না। পাখির মতো উড়ে যায় তাদের দাবি, উড়ে যায় তাদের কষ্টের কথা, কিন্তু কোনো সরকারের মন গলে না। যেন আমরা, এই পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক, শুধুই সংখ্যায় পরিণত হয়েছি, কোনো মানুষ না।
প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করা, কিন্তু এ দেশে শিক্ষকগণ যেন সর্বদা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আমরা নীরবতাকে সঙ্গী করে দিন কাটাই, আন্দোলন করি, অনশন করি, কিন্তু ফলাফল শূন্য। যেন এই দীর্ঘ দিনের আন্দোলন কেবল বাতাসে মিলিয়ে যায়। সরকারগুলো আমাদের দিকে তাকায় না, যেন আমরা কোনো মূল্যবোধ বা অধিকার দাবী করার যোগ্য নই।
শিক্ষকতা পেশা সহজ নয়। প্রতিটি ক্লাসে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন নিজের অধিকার রক্ষার কথা আসে, আমরা কোথাও দাঁড়াতে পারি না। আমরা সমাজ গড়ার কারিগর, কিন্তু আমাদের স্বীকৃতি নেই, আমাদের ন্যায্য বেতন নেই। আমাদের দাবি যেন কোনো অজানা ভাষায় লেখা কোনো বই, যা কেউ পড়তে চায় না।
এবারও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের অবস্থা বুঝতে পারে না। আমাদের আবেগ, আমাদের সংগ্রাম কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না তাদের উপর। দিন দুয়েক আগে শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের অবস্থা অনুভব করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমাদের মানোন্নয়নে নিলেন না কোন পদক্ষেপ। শুধু দুঃখ প্রকাশ করাই কি যথেষ্ট? শিক্ষার আলো যারা ছড়ায়, তারাই যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত।
আমরা কি কেউ নই? আমাদের স্বীকৃতি কেন নেই? আমাদের কি সেই মানুষদের মতো হতে হবে, যারা সবকিছু ধ্বংস করে নিজেদের দাবি আদায় করে নেয়? শিক্ষা তো ধ্বংসের পথে হাঁটতে শেখায় না, তা শিখায় নির্মাণের পথে। কিন্তু আমরা আর কতদিন এই নির্মাণের পথে পা বাড়িয়ে নিজেরা ধ্বংসের পথে হাঁটতে বাধ্য হবো?
শিক্ষকরা যখন ভাঙেন, সমাজ তখন ভাঙে। এ বাস্তবতা বুঝতে পারা এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই, আমাদের কান্না এবার শোনা হোক। আমরা চাই, আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক
You cannot copy content of this page