সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহে সরকারের বহুল প্রতীক্ষিত ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্প বাস্তবায়নের সূচি আরও একবার পিছিয়ে গেল। চলতি জুলাই মাসেই দেশের আট বিভাগের ১৫০টি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী দুপুরের খাবার পাওয়ার কথা থাকলেও, প্রয়োজনীয় টেন্ডার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্প চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব হারুন অর রশীদ জানান, “সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। আমরা টেন্ডার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। যদি সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোয়, তাহলে সেপ্টেম্বর থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে পুষ্টিকর খাবার।”
প্রকল্পটির আওতায় প্রাথমিকভাবে ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী সপ্তাহে পাঁচ দিন পুষ্টিকর খাবার পাবে। এই ধারা সফল হলে ধাপে ধাপে পুরো দেশজুড়ে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
নির্ধারিত খাদ্যতালিকায় থাকছে—
রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার: বনরুটি (১২০ গ্রাম) ও সিদ্ধ ডিম (৬০ গ্রাম)
সোমবার: বনরুটি ও ইউএইচটি দুধ (২০০ গ্রাম)
বুধবার: ফরটিফাইড বিস্কুট (৭৫ গ্রাম) ও মৌসুমি ফল/কলা (১০০ গ্রাম)
এই প্রকল্পে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশই বরাদ্দ রাখা হয়েছে খাবার সরবরাহের জন্য। শুধু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বেশি।
শুধু খাবার সরবরাহ নয়, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রতিটি উপজেলায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ মনিটরিং কমিটি। এসব কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটিতে আছেন স্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তারা, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্কুল প্রধান এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। মোট ১৯২টি ব্যাচে অনুষ্ঠিত হবে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম, যেখানে অংশ নেবেন প্রায় ১৯ হাজার ৭১৯ শিক্ষক ও কর্মকর্তা।
সরকারের এই প্রকল্প শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও প্রকল্প শুরু না হওয়ায় কিছুটা হতাশ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা।
সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর থেকে মিলবে পুষ্টিকর খাবার—এমন আশায় বুক বাঁধছে দেশের লাখো শিশুশিক্ষার্থী।
সূত্র: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
You cannot copy content of this page