বেতন নয় যেন ভিক্ষা!
বাংলাদেশের এমপিভুক্ত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী জুলাই মাসের ৯ তারিখেও বেতন পাননি। শোনা যাচ্ছে, রোববার বা সোমবার অর্থাৎ ১২ বা ১৩ তারিখে বেতন আসতে পারে। অথচ মাস শুরু হয়েছে ৯ দিন আগে! এই অনিশ্চয়তা কেবল আর্থিক দুর্ভোগ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার নগ্ন চিত্র।
একজন সরকার স্বীকৃত শিক্ষক মাস শেষে বেতন পাবেন—এটা কোনো “সুখবর” নয়, এটি তাঁর প্রাপ্য। অথচ কিছু তথাকথিত গণমাধ্যম এমন খবরকে “সুখবর” বলে প্রচার করে, যেন শিক্ষকরা কোনো দান-খয়রাত পাচ্ছেন! এটি শিক্ষক সমাজের সঙ্গে অবমাননাকর তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
শিক্ষকদের এ বেতন-সংকট নতুন কিছু নয়। প্রতি মাসেই এমন হয়। অথচ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেয়। সেগুলোর ব্যয় মেটাতে কোনো জটিলতা হয় না। হয় শিক্ষকের ঘাম শুকিয়ে, নয়তো সেমিনারের বিল ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সব ঠিকমতো হয়। কিন্তু মাস শেষে শিক্ষক বেতন পাবে কি না—তা নিয়ে প্রতিবার নাটক হয়।
এর দায় কার?
স্পষ্ট করে বলতে হয়—মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এমন বারবারের অব্যবস্থাপনা, শিক্ষকদের মানবেতর দশা দেখেও নির্বিকার থাকলে—তাদের এই দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত তাদের।
জাতি গঠনের কারিগরদের প্রতিমাসে এভাবে অপমান করা আর চলতে পারে না। শিক্ষক মানেই যেন বঞ্চিত, শিক্ষক মানেই যেন ভিক্ষুক—এই ছাপ ভেঙে দিতে হবে। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এখন সময় এসেছে—শিক্ষা প্রশাসনে দায়দায়িত্ব নিশ্চিত করার। সময় এসেছে শিক্ষকদেরও গর্জে ওঠার—কলমে, কণ্ঠে, প্রয়োজনে রাস্তায়। কারণ সম্মান আর প্রাপ্য রক্ষা করতে না পারলে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতটাই ধসে পড়বে।
মো: তানজিম হোসাইন
শিক্ষক ও সাংবাদিক।
You cannot copy content of this page