সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘স্যার’ ও ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধনের অনুশাসন বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রচলিত এই ‘বাধ্যতামূলক সম্মানসূচক সম্বোধন’-এর রীতি বাতিল করে সরকার বলছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাগরিকের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের সম্পর্ক হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে, না যে একপাক্ষিক আনুগত্যে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “সরকারি দপ্তরসমূহে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ‘স্যার’ ও ‘ম্যাডাম’ সম্বোধনের যে প্রথাগত বাধ্যবাধকতা ছিল, সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রটোকল ও আচরণবিধি সংস্কারের অংশ হিসেবেই এটি গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।”
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন বাধ্যতামূলক করার একটি অনানুষ্ঠানিক রীতি চালু ছিল। শুধু পুরুষ নয়, উচ্চপদস্থ অনেক নারী কর্মকর্তাকেও ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে দেখা যেত, যা বহুবার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। সমালোচকেরা একে ‘উচ্চমার্গীয় অসামঞ্জস্যতা ও উপনিবেশিক ধাঁচের’ ধ্বংসাবশেষ বলে অভিহিত করেছেন।
এই প্রথা বিলুপ্তির পাশাপাশি, উপদেষ্টা পরিষদ আরও জানিয়েছে যে, সরকারি পর্যায়ের প্রটোকল ও আচরণবিধির সংস্কার নিয়ে কাজ করতে একটি দুই সদস্যবিশিষ্ট পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন:
মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান – উপদেষ্টা (জ্বালানি, সড়ক ও রেলপথ)
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান – উপদেষ্টা (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন)
তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে সম্মানসূচক সম্বোধন এবং প্রটোকল নির্দেশিকায় প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নাগরিক সমাজ ও অধিকার সংগঠনগুলো। ট্রান্সপারেন্সি বাংলাদেশ-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক সমাজে কোনো নাগরিককে তার কর্মচারীকে ‘স্যার’ বলতে বাধ্য করা নীতিগতভাবে ভুল। এটি অপসারণ খুবই সময়োচিত পদক্ষেপ।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই সিদ্ধান্তকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে অনেকেই বলছেন, কেবল ‘স্যার-ম্যাডাম’ সংস্কৃতি বাতিল করলেই হবে না—প্রশাসনে গণতান্ত্রিকতা, জবাবদিহিতা ও ভদ্র আচরণের চর্চাও নিশ্চিত করতে হবে।
You cannot copy content of this page