সরিষাবাড়ী ও ধনবাড়ী প্রতিনিধি: ১৯ জুলাই ২০২৫ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তিনি মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, হঠাৎ করেই গরমে ক্লান্ত হয়ে মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন। এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শ উপেক্ষা করে তিনি আবার বক্তব্য চালিয়ে যান, যা দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বক্তব্য চলাকালীন প্রথমবার হঠাৎ করে পড়ে যান ডা. শফিক। দলের স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসকরা তাঁকে দ্রুত সহায়তা করেন এবং দাঁড় করিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর আবারও তিনি মঞ্চে পড়ে যান। এই অবস্থায় তাঁকে বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হলেও, তিনি বলেন, “আমি বক্তব্য শেষ না করে উঠব না।”
চরম গরম ও ডিহাইড্রেশনের প্রভাবে হিট স্ট্রোকে তিনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমাবেশস্থলে ছিল প্রচণ্ড গরম, যার মধ্যে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়া একজন প্রবীণ নেতার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল।
তবে সমস্ত শারীরিক দুর্বলতা ও সতর্কতা উপেক্ষা করেই বক্তব্য শেষ করেন তিনি। দলের সাত দফা দাবি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার— এসবই ছিল তার বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য।
ডা. শফিকুর রহমান গত সপ্তাহেই (৮ জুলাই) দলীয় কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন এই সমাবেশকে “ঐতিহাসিক” করে তুলতে। তাঁর বক্তব্যের শেষে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি নিজেই।
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ তাঁর দৃঢ়তা ও দায়িত্ববোধের প্রশংসা করলেও, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন সমাবেশের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডা. শফিকুর রহমানের এই আচরণ একদিকে যেমন তাঁর অটল মনোবলের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে দলীয় পর্যায়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাবও তুলে ধরেছে। তাঁরা বলেন, “নেতার জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাও একটি সংগঠনের দায়িত্ব।”
এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। সমাবেশ শেষেই তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটভূমিতে এই সমাবেশ ছিল জামায়াতের বড় ধরনের জনসমাগম। একে কেন্দ্র করে দলটি যে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা স্পষ্ট। তবে দলের শীর্ষ নেতার মঞ্চে অসুস্থ হওয়া তাদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় এক কর্মী বলেন, “ডাক্তার সাহেব আমাদের নেতা, তিনিই আমাদের প্রেরণা। আজ তিনি প্রমাণ করলেন নেতৃত্ব কেবল কথায় নয়, কাজেও।”
তবে রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের পাশাপাশি নেতৃত্বের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়ার দাবি উঠেছে অনেক মহল থেকে।
You cannot copy content of this page